বিনোদন ডেস্ক : একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে খুশির ঈদ। আর এই ঈদ শুধু আনন্দই নিয়ে আসে না, সঙ্গে নিয়ে এক আকাশভরা স্মৃতি। প্রতি ঈদেই সবাই শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা ঈদের স্মৃতিচারণ করেন। সাধারণ মানুষের মতো শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণের মুখর থাকেন। ঈদের দিন বিকেলে ৫টার দিকে ঈদের স্মৃতি নিয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন।
দীর্ঘ সে স্ট্যাটাসে বিজরী বরকতউল্লাহ লেখেন, আমার মা আমাদের দুবোনকে একই রকম জামা-কাপড় বানিয়ে দিতেন, একই রকম প্রিন্টের, একই রকম ডিজাইনের। এটা আমার একদম পছন্দের ছিল না। একটু বড় যখন হলাম তখন অন্য কালার আনতো একই প্রিন্টের, একই ডিজাইনের। ঈদের জামাকাপড়েরও একই অবস্থা।
কিন্তু জুতোর বেলায় আমি একটু কান্নাকাটি করে অন্যরকম নিতাম কারণ অন্যরকম আমি ছোটবেলা থেকেই হতে চাইতাম, একটু আলাদা। ঈদ ও জন্মদিনের স্মৃতি নিয়ে বিজরী লেখেন, যেমনভাবে আমার জন্মদিন উদযাপন কখনোই তেমন করে হয়নি। ছোটবেলা থেকেই সব সময় জন্মদিনের দিন অংক বা ইংলিশ পরীক্ষা কিংবা বাংলা ফাইনাল পরীক্ষা থাকতো। বন্ধুরা তখন বাসায় আসতো না।
কিন্তু প্রতিবছর আব্বা আম্মার কাছ থেকে স্পেশাল কোন গিফট আমি পেতাম। ক্লাস ফোরে পড়াকালীন দারুণ সুন্দর একটা সাইকেল পেলাম, ক্লাস সিক্সে একটা বড় কি-বোর্ড পেলাম। এরকম অনেক অনেক স্পেশাল গিফট আমার জন্য থাকতো জন্মদিন উপলক্ষে।
চুলের কাটিংয়ের কথাও তুলে এনেছেন বিজরী, ঈদের ব্যাপারটা আলাদা। নতুন করে চুল কাটানো হতো চাইনিজ কাট, সেটাও আমার একদম অপছন্দ ছিল। আমার ছোটবেলার অনেক ছবি আছে, যেখানে আমি চুল উপর দিকে তুলে ব্যান করে ফেলেছি। কিন্তু ভীষণ মজায় আমাদের ঈদের দিনগুলো কেটেছে, ভীষণ হইহুল্লোড়ে।
আমাদের অনেকগুলো কাজিন থাকায় আমরা সবাই একসঙ্গে হতাম ঈদের দিন। ঈদের মজা কাকে বলে আমার মনে হয় আমরা খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পেরেছি। সেজে-গুজে নানুর বাসা যাওয়া, খেলাধুলা করা, সালামি নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করা, কাড়াকাড়ি করা, সেই টাকায় আইসক্রিম খাওয়া আরও কত কি!
আনন্দময় ঈদের চাঁদ রাত নিয়ে বিজরী লেখন, আমাদের ঈদের আনন্দের সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিল চাঁদ রাত। সেই রাতে আব্বা আমাদের দুই বোন আর আম্মাকে নিয়ে শপিংয়ে যেত। সেদিন সে নিজেই আমাদের সবাইকে নানারকম গিফট- জামাকাপড়, জুতা, ম্যাচিং কানের দুল আলাদা করে কিনে দিত।
কড়কড়ে টাটকা জামার জন্য আমরা বসে থাকতাম সারা বছর। আম্মা আগে যা কিছুই কিনতেন না, কেন আব্বারটা হলো স্পেশাল। সেটাই ছিল ঈদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। একটা বড় আকর্ষণ ছিল ঈদের রান্না। আব্বা বাজার করে নিয়ে আসতেন, আম্মা রান্না করতেন। আমাদের দুই বোনের কাজ ছিল টিকিয়াগুলোকে গোল গোল এবং রোস্টের মাংসগুলোকে কাটা চামচ দিয়ে কেঁচাকেচি করা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সাজানো তো আছেই।
বিজরীর তার বাবার সঙ্গে শেষ ঈদের আবেগঘন বর্ণনায় লেখেন, সময়ের সঙ্গে জীবন কত বলতে যায়... এক জীবনেই কত রকম ঈদ দেখলাম আমরা!! আমার বাবার শেষ খাওয়া ছিল ঈদের কোরমা পোলাও রোস্ট। ঈদের দিন দুপুরে হাসপাতালে বসেই কি আরাম করে খেলেন সবকিছু। মনে হয়েছিল বহুদিন এরকম মজা করে কিছু খাননি।
আমি খুব অবাক হয়ে হাসাহাসি করছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে সেমাই যখন খেতে বললাম তখন বলল ‘না আমার ডায়াবেটিস, ঝামেলা হয়ে যেতে পারে .. আচ্ছা থাক একটু খাই এক চামচ’। কে জানত সেই তৃপ্তিকর খাবারটাই ছিল তার শেষ খাওয়া। তার শেষ ঈদের এবং আমাদেরও শেষ ঈদের।