বিনোদন ডেস্ক : খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক বজলুর রাশেদ চৌধুরী ২০০৮ সালে নির্মাণ করেন ‘বধূ তুমি কার’ ছবিটি। এতে নায়ক ছিলেন মান্না।
কিন্তু ছবির কাজ শুরু হওয়ার আগেই মান্নার মৃত্যু হলে রিয়াজ -শাবনূর আর নতুন ছেলে অনিককে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করা হয়।
আর এ ছবিতে কাজ করতে গিয়েই শাবনূর-অনিকের প্রেম বিয়ে হয়। নির্মাতার কথায় মান্নার দুঃখজনক মৃত্যু না হলে হয়তো শাবনূর-অনিকের সম্পর্ক হতো না। সবই আসলে বিধাতার ইচ্ছা।
মান্না-শাবনূর-অনিকের বিষয়টির স্মৃতি হাতড়ে বজলুর রাশেদ চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালের কথা। শাবনূরকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করতে চলেছি। ছবির নাম ‘বধূ তুমি কার’।
ত্রিভুজ প্রেম ও পারিবারিক দ্বিধা- দ্বন্দ্বের গল্পের এ ছবির নায়ক হিসেবে মান্নাকে সাইন করাই ও শিডিউল নিই। ৩০ জানুয়ারি শুটিং শুরু হবে। কিন্তু এর আগের দিন থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো।
২৯ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মান্না আমাকে ফোন দিয়ে বলল, বজলু ভাই, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে সকালে কি আপনি শুটিং করতে পারবেন? যদি না পারেন তাহলে রাতেই প্যাকআপ করেন।
না হলে সকালে সবাই চলে আসবে, এতে কনভেন্সসহ নানা খাতে আপনার কয়েক হাজার টাকা লোকসান হবে। বজলুর রাশেদ বলেন, মান্না যেহেতু একজন প্রযোজকও ছিলেন, তাই এ বিষয়ে তাঁর ভালো ধারণা আছে বলেই আমাকে এ পরামর্শ দেন।
কিন্তু আমি মান্নাকে বললাম, দেখুন আপনার প্রথম দিনের শুটিং আমি কীভাবে প্যাকআপ করব। মান্না বলল, প্রথম দিনের শুটিংয়ে তো কুফা লেগেই গেল শুটিং কইরেন না আমি আপনাকে শিডিউল বের করে দিচ্ছি। যা হোক তাঁর কথায় আমি রাতেই আমার ম্যানেজারকে বলে শুটিং প্যাকআপ করলাম। এর ঠিক ১৭ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি মান্নার দুঃখজনক অকাল মৃত্যু ঘটল।
মান্নার মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় কাকে নায়ক নেব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। ওই সময় শাবনূর-রিয়াজ জনপ্রিয় জুটি। তাই সবার পরমর্শে মান্নার জায়গায় রিয়াজকে কাস্ট করলাম।
মান্নাকে যখন নিই তখন মান্নার ছোট ভাই চরিত্রে কাজ করার মতো অনেক নায়কই ছিল। কিন্তু রিয়াজের ছোট ভাই হওয়ার মতো কোনো নায়ক পাচ্ছিলাম না।
তাই একটা নতুন ছেলে খুঁজছিলাম। তখন প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান ভাই আমাকে একটি ছেলের সন্ধান দিয়ে বললেন, তুমি এ ছেলেটিকে নিয়ে দেখ হয় কি না? ছেলেটির নাম অনিক।
তাঁকে দেখে আমার পছন্দ হলো। ওর ছবি শাবনূরের কাছে পাঠালাম। কিন্তু ওকে দেখে শাবনূর বেঁকে বসল। শাবনূর বলল, ও তো দেখতে বাচ্চা বাচ্চা, আমার সঙ্গে মানাবে না।
আমি বললাম, গল্পটাই তো এমন, তাকে যাতে না মানায় এবং দর্শক যেন তাকে গ্রহণ না করে আর গল্পে ফাইনালি দেখাব তোমাদের মধ্যে বিয়ে হবে না।
এ কথা শুনে শাবনূর বললেন, ঠিক আছে নিতে পারেন। বাস্তবতা হলো, শাবনূর যে ছেলেটির সঙ্গে অভিনয় করতে চাননি পর্দায় নায়িকা ও স্ত্রী হতে পছন্দ করেননি অথচ নিয়তির অমোঘ নিয়মে বাস্তব জীবনে তারা প্রেম ও বিয়ে করেন।
‘বধূ তুমি কার’ ছবিটি ছিল অনিকের জীবনের প্রথম ও শেষ ছবি। তাদের বয়সের পার্থক্য ছিল ১২/১৩ বছরের মতো। মানে শাবনূরের অনেক ছোট অনিক। শাবনূর আমাকে খুবই শ্রদ্ধা ও সমীহ করত বলে বিষয়টি আমার কাছে গোপন রাখে।
একদিন আমার এক প্রোডাকশন ম্যানেজার এসে আমাকে বলল, স্যার আপনার ছবির নায়ক অনিককে দেখলাম শাবনূরের সঙ্গে হোটেল সোনারগাঁওয়ে উঠতে।
আমি বললাম সে শাবনূরের অনেক জুনিয়র, হয়তো কোনো কারণে তাঁরা হোটেলে গেছে, তাতে কী হয়েছে। আমি বিষয়টিকে আসলে হালকাভাবে নিয়েছিলাম। কিন্তু এক সময় ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলাম।
২০১২ সালের দিকে দেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যমের সিনিয়র বিনোদন সাংবাদিক আলাউদ্দীন মাজিদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, বজলু ভাই আপনার কাছে একটা বিষয় জানার আছে, আপনিই প্রকৃত তথ্যটা দিতে পারবেন, আমি বললাম, জি বলেন।
মাজিদ ভাই বললেন, আপনার ‘বধূ তুমি কার’ ছবির হিরো অনিকের সঙ্গে নাকি শাবনূরের বিয়ে হয়েছে। এ বিয়ের বিষয়ে আমাকে বিস্তারিত জানালে আমি একটি বস্তুনিষ্ঠ নিউজ করতে পারব।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমি এই প্রথম মাজিদ ভাইয়ের কাছে শাবনূর-অনিকের প্রেম বিয়ে সম্পর্কে জানতে পারলাম। আর যখন জানতে পারলাম তখন শাবনূর-অনিক মা-বাবা হওয়ার পথে।
যাই হোক সবশেষে সেই কথাটাই আবার বলব যে, নিয়তির লিখন না যায় খন্ডন। মান্না যদি মারা না যেত তাহলে এ ছবিতে অনিকও আসত না, আর তাঁর সঙ্গে শাবনূরেরও সম্পর্ক হতো না। শেষ কথা হলো, মান্নার মৃত্যুতেই শাবনূর-অনিকের প্রেম-বিয়ে হয়েছিল। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন