বিনোদন ডেস্ক : লাইলি-মজনুর প্রেমকাহিনি শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। প্রেম, ভালোবাসা বা বিরহের প্রসঙ্গ এলেই সপ্তম শতকের আরব্য লোকগাথার এই জুটির নাম চলে আসে।
প্রেমের জগতে লাইলি-মজনুর উপাখ্যানের আবেদন চিরন্তন। এই দুই চরিত্র ঘিরে পুস্তকের পাতায় ও পর্দায় নানা কল্পকাহিনি যুগ যুগ ধরে চলছে।
এবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া নারী-পুরুষ যুগলের একটি ছবি। তাঁদের লাইলি ও মজনু বলে দাবি করা হচ্ছে।
ছবি দুটি নিয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ফটোর ওয়েবসাইট অ্যালামিতে অনুরূপ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবির নারীটি একজন বেদুইন। ছবিটির ধারণ করা হয়েছে ১৮৯৮ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যবর্তীকালে। উইকিমিডিয়া কমন্সেও ছবিটি সম্পর্কে একই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে এই নারীর ছবিটি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ছবিতে দৃশ্যমান নারীটি জর্ডানের কেরাক শহরের বাসিন্দা, তিনি সম্ভবত একজন শেখের স্ত্রী ছিলেন। উচ্চ সামাজিক মর্যাদা তাঁর দামি পোশাক (যা সম্ভবত হোমস, সিরিয়া থেকে এসেছে) এবং তাঁর চুলের বিনুনির মধ্যে ফুটে উঠেছে। এই ধরনের চুলের বিনুনি প্রধানত জর্ডানের উপজাতি খ্রিষ্টান নারীরা করতেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটিই কিছুটা বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। ছবিটি সম্পর্কে এসব বর্ণনার বাইরে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় ছবিটি আরব্য লোকগাথার চরিত্র লাইলির।
অনুরূপভাবে মজনু দাবি করে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে রাত্তিভা নামের একটি কমিউনিটি ওয়েবসাইটে অনুরূপ ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটি সম্পর্কে ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, এটি আরব উপদ্বীপ, জর্ডান ও ইরাকে গত শতাব্দীর শুরুর দিকে বসবাসকারী একজন বেদুইনের ছবি।
ছবিটি সম্পর্কে ব্রেইড বক্স ব্লগ নামের একটি সাইটে বলা হয়েছে, ছবিটিতে থাকা ব্যক্তিটি একজন বেদুইন। বেদুইনরা এভাবে চুলের বিনুনি করত। ব্লগটিতে ব্যক্তিটির পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
একইভাবে কাতার ভিজিটর নামের আরেকটি ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে শেখ ফয়সাল মিউজিয়াম নামে একটি জাদুঘর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবে তা থেকে ছবিটি সম্পর্কে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
লাইলির ছবিটির মতোই এ ছবিটি সম্পর্কেও ওপরের বর্ণনার বাইরে নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবিটি মজনুর হওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, লাইলি-মজনু সপ্তম শতাব্দীর নজদি বেদুইন কবি কায়েস ইবনে মুলাওয়া এবং তাঁর প্রেমিকা লায়লি বা লায়লা বিনতে মাহদির (পরবর্তীকালে ‘লায়লা আল-আমিরিয়া’ হিসেবে পরিচিত) প্রেমকাহিনিনির্ভর প্রাচীন আরব্য লোকগাথা। বিপরীতে ক্যামেরার আবিষ্কার সম্পর্কে জানা যায়, পৃথিবীর প্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন ১৮১৬ সালে ফরাসি উদ্ভাবক জোসেফ নিসেফরের মাধ্যমে। এর আগে যেহেতু ক্যামেরা আবিষ্কারের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তাই আলোচিত ছবিগুলোর মতো লাইলি-মজনুর কোনো ছবি পাওয়া সম্ভব না।
তবে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিভিন্ন জাদুঘর ও সংবাদমাধ্যমে তাঁদের কাল্পনিক আঁকা কিছু ছবি পাওয়া যায়। যেমন, তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহে লাইলি-মজনু সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে আজারবাইজানের লোকশিল্প হিসেবে লাইলি-মজনুর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
লাইলি-মজনু সপ্তম শতাব্দীতে রচিত প্রেমকাহিনিনির্ভর প্রাচীন আরব্য লোকগাথার দুটি চরিত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের দাবি করে দুটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে এ ছবি দুটি তাঁদের এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ওই সময়ে ক্যামেরা আবিষ্কার না হওয়ায় তাঁদের কোনো ছবিও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কাল্পনিক আঁকা কিছু ছবি পাওয়া যায়।