বিনোদন ডেস্ক: প্রায় এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক। তার পর বিয়ে। বিয়ের ১৮ বছর পর সেই সম্পর্কে যবনিকা পতন। দক্ষিণী তারকা ধনুষ এবং তার স্ত্রী, অর্থাৎ দক্ষিণের অভিনেতা রজনীকান্তের কন্যা ঐশ্বর্যা তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করেছিলেন দুই বছর আগে।
শেষমেশ বিবাহবিচ্ছেদের মামলা নথিভুক্ত করে সম্পর্ক শেষের কথায় সিলমোহর দিলেন দুইজনে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সমাজ মাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা তাদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করেছিলেন।
ওই বিবৃতিতে লেখা ছিল, ‘‘১৮ বছর একসঙ্গে থাকা। বন্ধু, দম্পতি এবং অভিভাবক হিসাবে। একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে। এই যাত্রা কেবলই একে অপরকে সঙ্গ দেওয়ার, বোঝার এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠার। এই সময় জুড়ে একে অপরের জন্য নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট বদল ঘটাতে হয়েছে।
আজ এই মুহূর্তে আমরা এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছি, যেখানে আমাদের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দম্পতি হিসাবে আমরা আলাদা পথে হাঁটব। স্বতন্ত্র ভাবে নিজেদের চেনার সময় নেব। অনুরোধ করছি, আমাদের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান দিয়ে ব্যক্তিগত পরিসরে থাকতে দেবেন।’’
দুই বছর আগে যখন ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করেছিলেন তখন থেকেই তাদের সম্পর্ক নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু হয়। কারও মতে, তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আবার কারও মতে, বোঝাপড়ার অভাবের জন্যই নাকি সম্পর্কে পাকাপাকি ভাবে ছেদ পড়ে তাদের। প্রকাশ্যে আসে দুই অভিনেত্রীর নামও। সূত্রের খবর, চেন্নাইয়ের আদালতে সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছেন ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা। জানা গিয়েছে, উভয় পক্ষের সম্মতিতেই বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া এগোবে।
২০০৩ সালে রজনীকান্ত-কন্যার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ধনুষের। তখন ঐশ্বর্যার বয়স ছিল ২১ এবং ধনুষের বয়স ছিল ২৩। ধনুষের ‘কাধাল কোনদেন’ ছবির প্রদর্শনীর সময় ঐশ্বর্যার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ অভিনেতার। তার আগে একে অপরকে চিনতেন না তারা।
ছবির প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পর নাকি প্রেক্ষাগৃহের মালিক ঐশ্বর্যার সঙ্গে ধনুষের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম আলাপে সৌজন্য বিনিময় হয়েছিল শুধুমাত্র। ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা খুব বেশি কথা বলেননি একে অপরের সঙ্গে। কিন্তু তার পর যা ঘটেছিল, তাতে আপ্লুত হন ধনুষ।
প্রথম সাক্ষাতের পরেই ধনুষের বাড়িতে ফুলের তোড়া পাঠান রজনীকান্ত-কন্যা। তোড়ার সঙ্গে ছিল একটি কার্ড। সেই কার্ডে লেখা, ‘‘ভাল কাজ করেছেন। যোগাযোগ রাখবেন।’’ ফুলের তোড়া পাওয়ার পর রজনীকান্তের কন্যাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানান ধনুষ।
তবে সেই ফোনালাপ গড়িয়েছিল বহু দূর। এর পর নাকি মাঝেমধ্যেই লোকচক্ষুর আড়ালে দেখা করতেন ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা। গোপনেই নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুই জনে। প্রকাশ্যে কখনও সেই সম্পর্কের কথা স্বীকার করতেন না।
ধনুষ এবং ঐশ্বর্যার পরিবার নাকি দেখাও করে। দুইজনের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের লোকেরা। ২০০৪ সালে ১৮ নভেম্বর ধুমধাম করে বিয়ে হয় ঐশ্বর্যা এবং ধনুষের। যাত্রা এবং লিঙ্গা— দুই পুত্রসন্তানের অভিভাবক তারা। জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্ম ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে কনিষ্ঠ পুত্রের জন্ম।
বিয়ের পর সমাজমাধ্যমে নিজের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন ঐশ্বর্যা। আগে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট থাকলেও বিয়ের পর সেই নামের সঙ্গে জুড়ে যায় পিতা এবং স্বামীর নামও। সমাজমাধ্যমে রজনীকান্তের কন্যা তার নাম বদলে রাখেন ‘ঐশ্বর্যা আর ধনুষ’।
ইংরেজি ‘আর’ হল তার বাবা রজনীকান্তের নামের আদ্যক্ষর। তার পরে জুড়েছিলেন স্বামী, তামিল নায়ক ধনুষের নাম। বিয়ের পরে এক সাক্ষাৎকারে ঐশ্বর্যা বলেছিলেন, ‘‘ধনুষের সঙ্গে আলাপের পর নিজেদের চিনতে চিনতেই আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।’’
এমনকি ধনুষও জানিয়েছিলেন, ঐশ্বর্যার সঙ্গে মেশার পর কখন যে তাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন তা নাকি বুঝতেই পারেননি। ২০১২ সালে ঐশ্বর্যা প্রথম ছবি পরিচালনার কাজে হাত দেন। ঐশ্বর্যা পরিচালিত ‘৩’ ছবির অভিনেতা ছিলেন ধনুষ।
ধনুষের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য নায়িকা হিসাবে ছোটবেলার বান্ধবী শ্রুতি হাসানকে পছন্দ করেন ঐশ্বর্যা। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই ছবি শুটের সময় ধনুষের সঙ্গে কমল হাসনের কন্যা শ্রুতির প্রেম জমে ওঠে।
একাংশের দাবি, বয়সে বছর দুয়েকের বড় স্ত্রী ঐশ্বর্যাকে নাকি আর মনে ধরছিল না ধনুষের। রেডিয়োয় এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রুতি এবং ধনুষ। দুই তারকার কথা বলার সময়ে পরিকল্পনা মতো অতিথির আসনে যোগ দিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা।
তবে ঐশ্বর্যা আসার পরেই ‘শরীর খারাপ’-এর কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ধনুষ। অনেকের ধারণা, কোনও ভাবেই শ্রুতি এবং ঐশ্বর্যার সঙ্গে এক মঞ্চে আসতে রাজি ছিলেন না অভিনেতা। তাই অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।
শ্রুতির সঙ্গে ধনুষের ‘বিবাহ-বহির্ভূত’ সম্পর্কের জন্য নাকি ধনুষ-ঐশ্বর্যার সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। তবে ধনুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে শ্রুতি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে ‘৩’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সাহস জুগিয়েছিলেন ধনুষ।
যখন সবাই আমার প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছেন তখন কেবলমাত্র ধনুষই আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন। কয়েক জন আমাদের নিয়ে গুজব রটাচ্ছেন বলে ধনুষের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে রাজি নই আমি। আমরা কেবল ভাল বন্ধু।’’
ধনুষ এবং শ্রুতির সম্পর্ক নিয়ে সমস্ত কানাঘুষো বন্ধ হয়ে যায় ঐশ্বর্যার মন্তব্যের পর। তিনি জানিয়ে ছিলেন, ধনুষ এবং শ্রুতিকে নিয়ে যে সমস্ত কথাবার্তা রটানো হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তার পরেই শান্তনু হাজারিকার সঙ্গে শ্রুতির সম্পর্ক অনুরাগীদের চোখের সামনে তুলে ধরায় দুই তারকার সম্পর্ক নিয়ে সমস্ত কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৫ সালে তামিল ইন্ডাস্ট্রির অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণণের সঙ্গে বরুণ মানিয়ানের আংটিবদল হয়। কিন্তু বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি তারা। বরুণের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় অভিনেত্রীর। অনেকে মনে করেন, এই সম্পর্ক ভাঙনের নেপথ্যেও ছিলেন ধনুষ।
‘কোড়ি’ নামের একটি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন ধনুষ এবং তৃষা। কিন্তু দুই তারকার বন্ধুত্ব বহু দিনের। কানাঘুষো শোনা যায়, তৃষা তার আংটিবদলের অনুষ্ঠানে ধনুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে অভিনেত্রীর সঙ্গে বিবাদ হয় বরুণের।
সেই সময় তৃষা এবং ধনুষের পার্টিতে তোলা একটি ছবি সমাজমাধ্যমে জড়িয়ে যায়। একাংশের দাবি, ধনুষের সঙ্গে তৃষার সম্পর্কের কারণেই নাকি অভিনেত্রীর বিয়ে ভেঙে যায়।
সংবাদমাধ্যমের একটি পুরনো প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাম্পত্যজীবনে টানাপড়েন চলছিল ধনুষ এবং ঐশ্বর্যার। শোনা যায়, ধনুষ যখন শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন না, শুধুমাত্র তখনই ঐশ্বর্যার সঙ্গে সময় কাটাতেন তিনি। দুইজনের একসঙ্গে থাকার সুযোগ হত কম।
তাদের দাম্পত্যজীবনে নাকি বোঝাপড়ার সমস্যাও ছিল। পেশাগত জীবনে ধনুষ এবং ঐশ্বর্যার পছন্দ-অপছন্দ ও সিদ্ধান্তের তফাত এবং কাজের ব্যস্ততাই সম্পর্কের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে একাংশের দাবি।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ধনুষ বরাবরই পেশাকে বেশি গুরুত্ব দেন। অভিনয়ের সূত্রে একটানা আউটডোর শুট এবং অন্য শহরে যাওয়া তাদের পারিবারিক জীবনে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। অনেকের মতে, ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা বিচ্ছেদের ঘোষণা করতে অনেকটা সময় নিয়েছেন।
তারা সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টা করছিলেন বলেও মনে করেন অনেকে। শোনা যায়, ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নাকি রজনীকান্ত উদ্যোগী হন কন্যার দাম্পত্যজীবনের ভাঙন ঠেকাতে। ধনুষের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন রজনীকান্ত। কিন্তু শ্বশুরের সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন অভিনেতা।
তবে বিচ্ছেদের ঘোষণার পর ঐশ্বর্যা আর স্বামীর নামে নিজের পরিচয় দিতে চাননি সমাজমাধ্যমে। তাই ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে মুছে ফেলেছিলেন ধনুষের নাম। নাম বদল করে রাখেন ‘ঐশ্বর্যা রজনীকান্ত’।
বিচ্ছেদের ঘোষণার পর ঐশ্বর্যা পরিচালিত গানের ভিডিয়ো মুক্তি পাওয়ার পর রজনীকান্তের কন্যাকে শুভেচ্ছা জানানোর সময়ে তাকে সমাজ মাধ্যমে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করেছিলেন ধনুষ। ধনুষ এবং ঐশ্বর্যা দু’জনে আলাদা ছাদের নীচে বাস করছিলেন বলে কানাঘুষো শোনা যায়।
দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব যৌথ ভাবে সামলাচ্ছেন তারা। ধনুষ কিংবা ঐশ্বর্যা— দুইজনের কেউই চান না তাদের ব্যক্তিগত জীবনের আঁচ সন্তানদের উপর পড়ুক। দুইজনের সম্পর্ক নিয়ে বিগত কয়েক বছরে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। পরে অবশ্য পারিবারিক হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে।
অনেকেরই ধারণা ছিল, হয়তো ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমান মিটিয়ে নিয়ে ফের এক হবেন তারা। কিন্তু আর তেমনটা ঘটার সুযোগ নেই। বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণার পর ‘লাল সালাম’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনা করেছেন ঐশ্বর্যা।
ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তার বাবা রজনীকান্ত। অন্য দিকে ধনুষকে ‘ক্যাপ্টেন মিলার’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। এর পর দক্ষিণী সঙ্গীত পরিচালক ইলাইয়ারাজার বায়োপিকে অভিনয় করতে দেখা যাবে ধনুষকে।