সেই ২৫ হাজার টাকার চাকরি ছেড়ে অভিনয়ে, এখন মাসে জামিলের আয় কত জানেন?

অপূর্ণ রুবেল: ছিলেন পুরোদস্তুর ৯-৫টা চাকরিজীবী। সকাল শুরু হতো রামপুরার এক বাসায়। ছোট্ট একটা রুমে। রুমের ভাড়া ছিল চার হাজার টাকা। থাকতেন একাই। চাকরি করতেন একটি আইটি ফার্মে। চাকরি শেষে মাসে মিলত ২৫ হাজার টাকা। সেটা দিয়েই চলত জীবন।

কিন্তু বন্ধুমহলে পরিচিত ছিলেন ‘রসিক’ নামে। তার আড্ডায় উপস্থিতি মানে হাসির রোল। কাছের মানুষেরা সেসব দেখে অভ্যস্ত। পরামর্শ দিতেন ‘তুই ইত্যাদিতে যা, না হয় অভিনয় কর।

ভালো করবি।’ তবে সেসব দিকে পা বাড়াননি তিনি। তত দিনে দুই দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জি বাংলার কমেডি বিষয়ক রিয়ালিটি শো ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার’। সিজন ৬-এ যাওয়ার জন্য বলেন এক ছোট ভাই।  

২০১২ সাল। চলছে মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার সিজন ছয়-এর অডিশন। ঢাকায় সে অডিশনে নাম লেখান ২৫ হাজার টাকা বেতনে ৯-৫টা চাকরি করা সেই তরুণ জামিল হোসেন। অডিশনে পাস। 

টিকিট মেলে কলকাতা যাওয়ার। যারা ২০১২ সালে মীরাক্কেল দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া আবু হেনা রনি, জামিল হোসেন, আনোয়ারুল আলম সজল এবং ইসতিয়াক নাসিরের কথা মনে আছে। 

সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন বাংলাদেশের তরুণ আবু হেনা রনি। আর সেরা চারে ছিলেন এই জামিল হোসেন। ফিরে এসে আর পুরনো চাকরিতে যোগ দেননি জামিল। কারণ কী?

কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে জামিল বলেন, “আমার মীরাক্কেলের বেশির ভাগ পরিবেশনা ছিলে অভিনয়নির্ভর। সেগুলো দেখে তিন বিচারক প্রায়ই বলতেন, ‘জামিল তোর মধ্যে একজন অভিনেতা বাস করে। 

তুই অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করিস।’ তাদের এই কথাগুলোই আমাকে দেশে ফিরে অভিনেতা হওয়ার জন্য বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু চাইলেও দেশে ফিরে কাজের সুযোগ পাইনি। এ জন্য কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ঢের।”

সেই কাঠখড় পোড়ানোর গল্পটা জামিলের কাছে জানতে চাই। অকপট হয়ে বলা শুরু করেন তিনি। মীরাক্কেল শেষ করে এসে আর পুরনো চাকরিতে যোগ দেননি তিনি। তাহলে চলছিল কী করে?

জামিল বলেন, ‘তখন বেশ কিছু করপোরেট শো করার সুযোগ পেয়েছিলাম। পাশাপাশি অভিনয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করি। ওই সময় আসলে সব নাটক ছিল টেলিভিশননির্ভর। 

তাই সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য কঠিন ছিল। আর আমার যেহেতু অভিনয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, মানে থিয়েটার চর্চা নেই, তাই ওই সময় কেউ সেভাবে সুযোগও দিচ্ছিল না।’

জামিলের প্রথম অভিনয় ছিল ২০১৩ সালের দিকে তারিক আনাম খানের সঙ্গে। নাটকের নাম ‘রঙিন জামা’। পরিচালক সুজন বড়ুয়া। তারপর বিভিন্ন নাটকে এক, দুই দৃশ্য বা পাসিং শট, যেটাই যেখানে সুযোগ পেয়েছেন করে গেছেন।  

সেইসব স্মৃতি মনে করে জামিল বলেন, ‘আমার জন্য ওটা খুব কঠিন সময় ছিল। একদিকে নিজেকে টিকিয়ে রাখা আবার প্রমাণ করা যে আমি অভিনয় পারি। 

আসলে ভালো কিছু করতে হলে সবার জীবনে কঠিন সময় পার করতে হয়। আমার জন্য ২০১৩ সাল থেকে কঠিন সময় শুরু হয়েছিল। কারণ আমি জানতাম কেউ আমাকে নিয়ে ঝুঁকি নেবে না। তাই প্রমাণ করে করেই এগোতে হবে।’

অভিনয়ে জামিলের ‘আইডল’ মোশাররফ করিম। তার সঙ্গে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অভিনয় করতে গিয়ে শিখেছেনও। 

জামিল বলেন, ‘আসলে আমার তো চেহারা সুন্দর না। যা করার অভিনয় দিয়েই করতে হবে। আর অভিনয়ের জায়গায় তো মোশাররফ ভাই একজন মাস্টার। তাই তিনি আমার আইডল।’

তবে জামিলকে আলাদা করে সবাই চিনেছে আদিবাসী মিজান নির্মিত ‘হাইপ্রেসার ১’ ও ‘২’ এবং ‘সান্তনা দে’ নামের নাটকগুলো দিয়ে। 

এসব নাটকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন মোশাররফ করিমকে। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি জামিল হোসেনকে। অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। সংখ্যাটা নিজেই বলতে পারলেন না। 

তবে যেটা জানালেন সেটা হলো- শুধু তাকে প্রধান চরিত্র করে এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে অর্ধশতাধিক নাটক। এখন এক-দুই দৃশ্যের অভিনেতাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন প্রযোজকরা। 

বিনিয়োগ করছেন তাকে ঘিরে। এখন মাসের ২০ দিন অভিনয় করেন তিনি। হিসাবটা দিলেন এভাবে, ‘একটা একক নাটকের জন্য দুই দিন করে সময় দিই। 

প্রতিটির মাঝে আবার এক দিন বিশ্রাম নিই। একটা সময় ধারাবাহিকে এক-দুই দৃশ্যের অভিনয়ের জন্য বসে থাকতাম, এখন ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের সুযোগই পাই না।’ বলেন তিনি। 

অবশ্যই জামিলের নাটক মানেই এখন ভিউয়ের ছড়াছড়ি। সেই জায়গাটা এখন পাকাপোক্ত করেছেন এই অভিনেতা। তাহলে আয়?

জামিল এখানেও অকপট। বলেন, “আমি নাটকপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে নিই। আর ‘জামিল জু’ নামে আমার নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানেও আমার অভিনীত নাটক মুক্তি পায়। তাই শুধু অভিনয় না, নাটকও প্রযোজনা করি আমি।”

সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ লাখের বেশি টাকা আয় করেন জামিল। কিনেছেন গাড়িও। থাকেন উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে। পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। 

তবুও বরাবরই অভিনয় নিয়ে স্বপ্ন দেখা এই তরুণের আজন্ম স্বপ্ন একজন ‘ভালো অভিনেতা’ হওয়া। সে লক্ষ্যে প্রতিদিনই নতুন কিছু করার চেষ্টা করে যান। আজ এই অভিনেতার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন জামিল হোসেন। সূত্র: কালের কণ্ঠ