ইমরুল নূর : ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ -কথাটি তার জন্য একদম যুতসই। স্বামী, সংসার ও সন্তান; নিজেকে শুধু এই তিন ‘স’ তে আবদ্ধ রাখেননি। রূপে-গুণে আর অভিনয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য মাত্রায়। বলছিলাম নন্দিত মডেল ও অভিনেত্রী রাফিয়াত রশীদ মিথিলার কথা।
অভিনেত্রীর বাইরে তিনি একজন গবেষক, শিক্ষক, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার। শুধু তাই নয়, তিনি একজন লেখক এবং উন্নয়ন কর্মীও। গবেষণা বিষয়ক লেখালেখির পাশাপাশি শিশুদের জন্য বই লিখেন তিনি। এক নামের পাশেই যার এত পরিচয় তার গুণ সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষাই রাখে না।
সিনেমা, সংসার ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় জনপ্রিয় এ তারকার সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
আজ মুক্তি পেল আপনার অভিনীত সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’। সিনেমাটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এটি সম্পর্কে জানতে চাই...
‘জলে জ্বলে তারা’ হচ্ছে একটি নদী ও নারীর গল্প।
গল্পের নারীর নাম তারা। এখানে আমি সেই ‘তারা’ , যে তারার প্রতিচ্ছবি পানিতে জ্বল জ্বল করে। এই সমাজে একটা শিশু থেকে নারী হয়ে উঠার মধ্যে যে কিরকম যাঁতাকলে পড়ে; ঠিক সেরকমই একটা গল্প। বলা যায়, নারীর নিষ্পেষিত হওয়ার গল্প।
এই তারা চরিত্রটি আমার জন্য একদমই নতুন।
গত ৫ বছরে আমি যে ধরণের চরিত্র করেছি সেগুলো থেকে নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছি। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছি, দর্শকেরাও যেন আমাকে নতুনভাবে দেখে। চরিত্রটা করতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে। এই তারা চরিত্রটা আমার অভিনয় ক্যারিয়ারে একটা নতুন সংযোজন। আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে।
এই সিনেমাটিতে যুক্ত হওয়ার বিশেষ কারণ কী?
নারীপ্রধান গল্প; এটা একটা কারণ। আমি তো এত বেশি নিয়মিত অভিনয় করি না, যখনই করি তখনই চাই এই ধরণের গল্পগুলোতে কাজ করতে। সহজভাবে যদি বলি, নারীপ্রধান গল্পগুলোই আমাকে বেশি টানে। এই ধরণের গল্পগুলোতে অভিনয়ের অনেক জায়গা থাকে, এ কারণে কাজ করে আমিও অনেক বেশি আনন্দ পাই। এখানে সেগুলোর সবকিছুই পেয়েছি যার কারণে কাজটি করতে রাজি হওয়া। আরেকটা কারণ হচ্ছে এখানের ‘তারা’ চরিত্রটির মত গ্রামীণ কোনো চরিত্র এর আগে কখনো করিনি, সবসময় আরবান চরিত্রগুলোই করা হয়েছে বেশি। এখানে দর্শক আমাকে নতুনভাবে দেখবে।
এই সিনেমাটি দর্শক কেন দেখবে বলে আপনি মনে করেন?
এখন দর্শক এমনিতেও হলে যাচ্ছে না। অনেক দিন ধরে হলগুলোও বন্ধ হয়ে আছে। আমার কাছে মনে হয়, দর্শক যেরকম ছবি দেখতে চায় কিংবা পছন্দ করে সেরকম ছবি হয় না। ‘জলে জ্বলে তারা’ এমন একটি ছবি যেটা দর্শক দেখতে চাইবে। এর গল্পটা খুবই সুন্দর। এটা সর্বস্তরের দর্শকের দেখার মতো একটা ছবি। এখানে আমি-নাঈম ছাড়া আরো অনেকেই রয়েছেন যারা খুবই শক্তিমান অভিনয়শিল্পী; যেমন- ফজলুর রহমান বাবু, আজাদ আবুল কালাম, মুনিরা মিঠু, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান আছে। সেইসঙ্গে সিনেমাটিতে খুব সুন্দর সুন্দর গান, অ্যাকশন, রোমান্স, সাসপেন্স, ক্লাইমেক্স আছে। এন্টারটেইনড হবার মতো সবকিছুই এই সিনেমাটিতে আছে। আমার বিশ্বাস সিনেমাটি সবার ভালো লাগবে।
আপনি চাকুরী করছেন, এর ফাঁকে সংসারও সামলাচ্ছেন। এরমধ্যে পিএইচডি চালিয়ে যাচ্ছেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন। এতকিছু একসঙ্গে কীভাবে সামলাচ্ছেন?
কষ্ট তো হয়। এটা কিন্তু আমি বহু বছর ধরেই করে আসছি। প্রায় প্রতিটা দিনই আমি তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকি। প্রায় ১৮ বছর ধরে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালে আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের প্রধান হিসাবে কর্মরত আছি। প্রোগ্রামটির প্রধান হিসেবে আমার অনেক দায়িত্ব, অনেক কাজ। বেশিরভাগ সময় আমাকে দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হয়। আফ্রিকার ৬টি দেশে আমার প্রজেক্ট চলে। এসব দেশগুলোতে আমার নিয়মিত যেতে হয়। এরকমও হয় যে প্রতি মাসেই আমাকে দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। এর মাঝে আমি ঢাকাতে থাকছি। এখানে থাকলে আমাকে ফিজিক্যালি অফিসে যেতে হয় এরপর পরিবারকে সময় দিতে হয়। এর বাইরে আমার অন্যান্য কাজও থাকে। তাছাড়া আমি যেহেতু পিএইচডি করছি, আমাকে পড়াশোনাও করতে হচ্ছে (এ বছরই শেষ হবে)। সব মিলিয়ে আমাকে সবসময়ই ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়। এভাবেই চলছে জীবন।
আপনার মেয়ে (আইরা তাহরিম খান) এখন বড় হচ্ছে, বুঝতে শিখছে। এত ব্যস্ততার মধ্যে মেয়েকে ঠিক কতটুকু সময় দিতে পারেন? মায়ের কাছে মেয়ের কোনো অভিযোগ আছে কী?
না। কারণ আইরা জানে অফিসের বাইরের বাকিটা সময় আমি তাকে দেই। এসব নিয়ে ওর মধ্যে কখনো কোনো অভিযোগ নেই। বাসায় না থাকলে যদি বাহিরে কোনো কিছুর প্ল্যান করি সে জানে যে সেটা ওকে নিয়েই প্ল্যান করি। আমার কাজ, ব্যস্ততা ও বুঝতে পারে। খুব ছোটবেলা থেকেই আমার সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। সো, আমাকে নিয়ে আইরার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ সে তার মায়ের কাজ এবং জীবন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
আইরাকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী, তার কখনও অভিনয়ে আসার ইচ্ছে কি না?
আইরা এখন মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওর জীবনের পথ পুরোটাই বাকি। এখনই এতকিছু ভাবছি না। আর ও চায় না ওকে নিয়ে আমি ইন্টারভিউতে কথা বলি। ওর নাকি প্রাইভেসি নষ্ট হয়। ও যেটা করতে চায় সেটাই করবে। মা হিসেবে আমি তাকে সাপোর্ট করব। এখন ছবি আঁকতে, গান গাইতে ভালোবাসে। যদিও প্রতিদিনই ওর ইচ্ছার পরিবর্তন হয় যে, বড় হয়ে এটা করবে, ওটা করবে। তবে অভিনয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত আমাকে কিছু বলে নি। যদি অভিনয় করতে চায়, করবে। আমি শুধু চাই একজন স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠুক।
তাহসান খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে এখন বেশ সুখেই সংসার করছেন। তাহসান কিংবা সৃজিতকে জড়িয়ে সব ধরণের খবরেই আপনার নাম ওঠে আসে, সেটা সোশ্যাল মিডিয়া হোক কিংবা গণমাধ্যমে। এই বিষয়গুলো আপনার স্বাভাবিক জীবনে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না?
না। একদমই না। তুমি (এই প্রতিবেদককে) তো আমাকে দেখতেছো, আমার জীবন সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানো। এত ব্যস্ত থাকি, আমার সময়টা কোথায় এগুলো মাথায় নেওয়ার?
আমি খুবই আত্মনির্ভরশীল একটা মানুষ, কারও ওপর নির্ভর করে থাকতে পছন্দ করি না। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। আমার স্বামীও তাই। যারা কাজের মানুষ তারা ঠিকই বুঝে। তারা নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অন্যের কাজেও ঝামেলা করে না। কিন্তু যাদের কোনো কাজ নেই তারাই সারাক্ষণ এসব নিয়ে মেতে থাকে। আমাকে নিয়ে মানুষের অনেক চিন্তা। তাদের ধারণা- ও (মিথিলা) এত ব্যস্ত, ওকে নিশ্চয় ওর মেয়ে কিছু বলে, স্বামী কিছু বলে! জীবন তো একটাই। কাজটা থাকবে তাই কাজটাই করে যেতে চাই।
মানুষ কি ভাবছে সেগুলো নিয়ে আমি কখনোই চিন্তিত না। আমার পরিবার, সন্তান, আশেপাশের মানুষগুলোই আমার সাপোর্ট সিস্টেম, তারা সবাই আমাকে বুঝে। আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট করছে কি না, এটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আলহামদুলিল্লাহ সেই সাপোর্ট আমি সবসময় পেয়ে আসছি।