মাহতাব হোসেন: সম্প্রতি ছেলের মামলার বিষয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী রিনা খান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে সেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
এক ভিডিও বার্তায় রিনা খান বলেছিলেন, ‘আমি বিএনপি করি বিধায় আমার ছেলে ২০০৯ সালে জার্মান গেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তার নামে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে। আমার ছোট ছেলের পেছনেও পুলিশ লেগে ছিল আমি ঘরেই থাকতে পারতাম না।’
রিনা খানের সেই মামলার কী অবস্থা জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাদের আবেদন কোর্টে দেওয়া হয়েছে। আমি কোর্টে গিয়েছিলাম। শিগগিরই আমরা কাগজপত্র হাতে পেয়ে যাব।
এর পরই একটু শান্তি পাব। কারণ বিগত আওয়ামী লীগের আমলে আমাকে এত বেশি হয়রানি করা হয়েছে যে এক ধরনের ভয় তৈরি হয়ে গেছে আমার মধ্যে। যখন তখন পুলিশ চলে এসে জানতে চাইত আমার ছেলে কোথায়। আমার ছেলে মনে করে আমার ভাড়াটিয়ার ছেলেদেরও হয়রানি করা হতো। আসলে আমি বিএনপি করতাম বলেই আমার বিরুদ্ধে এসব হয়েছে।’
রিনা খানের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানির কারণ নাকি তারা পুরো পরিবার বিএনপি করেন। এমনটাই জানিয়ে রিনা খান বললেন, ‘দেখেন আমাদের পুরো পরিবার বিএনপি করেন। আমার মা-বাবা, ভাই সবাই বিএনপি করেন। তাছাড়া বিএনপির সময় আমি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম।
বিএনপির সাঙ্গঠনিক কার্যক্রমে ঢাকার বাইরে, বগুড়াসঃ বইভিন্ন জেলায় যেতাম। এটা আমার বিরুদ্ধে ঝামেলা করার মূল কারণ। আমি নিজেও ছোট বেলা থেকে বিএনপি সমর্থন করতাম। তারপরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমি মনে প্রাণে বিএনপিকে পছন্দ করা শুরু করি।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাকে রিনা খানকে একটি সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি অভিনেত্রীর হৃদয়ে এখনো ঝলমল করে। এমনটাই জানিয়ে রিনা খান বললেন, ‘‘তখন আমি স্কুলে পড়ি। মিরপুর শাহ আলিতে আমাদের বাড়ি। সব রকম খেলাধুলাতে অংশ নেই। বিশেষ করে আমি সাইক্লিস্ট ছিলাম।
১৯৭৮ সালের কথা, বাংলাদেশ অলিম্পিকের আয়োজন সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হই। তখন আমাদের বঙ্গভবনে ডাকা হয়। গেলাম। দেখা হলো, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাকে বললেন, ‘খুকি তুমি কী চাও?’ আমি সাইক্লিং করি, কিন্তু একটা ভালো সাইকেল নেই। তখন আমি বললাম, আমি সাইকেল চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে তোমাকে ভালো সাইকেল দেব। এরপর জাপান থেকে ৬ টা সাইকেল আনা হয়। আমাকে একটা সাইকেল উপহার দেন।’’
রিনা খান মূলত ময়দান থেকেই পর্দায় এসেছেন। নিজের অভিনয়ে আসার বিষয়টি অনেকটাই কাকতালীয় ছিল। এমনটাই জানিয়ে এই খল অভিনেত্রী বললেন, ‘মনে হয় ১৯৮১ সালের কথা, একদিন স্টেডিয়ামে নির্মাতা সুভাষ দত্ত এলেন। তখন আমি নিয়মিত সাইক্লিং করি। তাঁর সিনেমায় বাজাজ চালাতে হবে- এমন একজন মেয়ে দরকার।
সেই মেয়ে খুঁজতেই স্টেডিয়ামে তাঁর আগমন। তিনি আমাকে দেখে ডাকলেন। এরপরই সেই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। আমি সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলাম। মাত্র মেট্রিক পাশ করেছি। সেই অবস্থাতেই আমি অভিনয়ে নেমে পড়লাম। করলাম প্রথম সিনেমা সোহাগ মিলন। এরপর একে একে চলচ্চিত্রের মানুষই হয়ে গেলাম। সেই থেকে আমাকে সবাই রিনা খান হিসেবেই চেনে। মাঝখানে অনেকদিন অভিনয় বন্ধ রেখেছিলাম। কেননা অশ্লীলতা সিনেমায় ঢুকে পড়েছিল। সেসময় নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
রিনা খান এখন চলচ্চিত্রে খুবই কম অভিনয় করেন। এই অভিনেত্রী এখন মনোযোগ দিয়েছেন নাটকে। শুধু অভিনয় নয়, নাটকে প্রযোজনাও করছেন। নিজেই বানাচ্ছেন নাটক। এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বললেন, ‘আমি নিজেই একটি নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলেছি। আমার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। এটা ৩ মাস হলো। আমি নিজেই নাটক বানাই, সেই চ্যানেলে নাটক রিলিজ দেই। আজকেও একটা নাটকের শুটিং ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে প্যাকড আপ করতে বাধ্য হলাম।’- কালের কণ্ঠ