এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম। সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংয়ে তিনি এমন কথা বলেন।
তবে আদালতে তৌহিদ আফ্রিদির জামিন চাওয়ার সময় তার কিডনি জটিলতা এবং স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন আইনজীবী।
রোববার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলার আসামি তিনি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী তার বাবা। একই মামলায় তিনিও কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেফতার আফ্রিদিকে সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে তোলা হয়।
তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় এজলাসে হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের মধ্যেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, তৌহিদ আফ্রিদি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ-বিদেশে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি সেলিব্রেটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেন এবং যারা দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
আরও বলা হয়, একইসঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আন্দোলনের বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ যোগান। তার এই কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসাদুল মারা যান বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এরপর তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি বলেন, বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিক্টিম (আসাদুল) নিহত হয়েছেন। এখানে আসামির কোনো ভূমিকা নেই। গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, তথ্যগত ভুলের কারণে তৌহিদ আফ্রিদির নাম যোগ হয়েছে। তাকে এই মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোনো বাধা নেই।
তিনি আরও বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসাও চলছে। অতিরিক্ত হাঁটাচলায় তার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে। এছাড়া তার স্ত্রী গর্ভবতী। মানবিক দিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুরের আর্জি জানান আইনজীবী।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন ও ঢাকা বারের সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান মুকুল রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানির পর আদালত থেকে বেরিয়ে তৌহিদ আফ্রিদির আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে বলেছি যে, তৌহিদ আফ্রিদি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। শারীরিকভাবে সে অসুস্থ। সে লিভার এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে সুস্পষ্ট আছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়, মহিলা হয়, প্রতিবন্ধী হয় তাহলে তার রিমান্ড দেওয়া যাবে না। তার অসুস্থতার সমস্ত কাগজপত্র আমরা বিজ্ঞ আদালতে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজকের যে আদেশ হয়েছে, সাত দিন রিমান্ড চাওয়া ছিল, পাঁচ দিন রিমান্ড হয়েছে, জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আদেশে আমরা সংকুব্দ হয়েছি। আমরা মনে করি, সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নয়ন বলেন, একজন ইউটিউবার মিডিয়া সন্ত্রাস তৌহিদ আফ্রিদি। এই মিডিয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় যে এলিগেশন, সে মিডিয়ার মাধ্যমে, তার ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ সকলকে উৎসাহী করে। এই হত্যায় সে সরাসরি যুক্ত ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই তৌহিদ আফ্রিদি যে ছাত্ররা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল, সেই ছাত্রদের শরীরের কাপড়-চোপড় সরিয়ে ভিডিও করে রেখে দিত, জিম্মি করে রেখে দিত।
তৌহিদ আফ্রিদিকে দীর্ঘদিন পুলিশ খুঁজছিল। গতকালকে তাকে পেয়েছে। সিআইডি তাকে বিজ্ঞ আদালতে আজকে উপস্থাপন করেছে। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয়পক্ষের শুনানিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।