মাহতাব হোসেন : সাবিনা ইয়াসমিনের প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিটির পরিচালক হিসেবে জহির রায়হানের নাম উল্লেখ থাকলেও আদতে ছবির পরিচালক জহির রায়হান নন। এই ছবির পরিচালক দুজন। এরা হলেন— আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু। কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বললে জহির রায়হানের প্রসঙ্গ এসে যায়।
কেন আসে? সে প্রশ্নের উত্তরে পরে আসি। তাঁর আগে বলা যাক সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া প্রথম গান কিভাবে জাতীয় সংগীত হয়ে গেল। যদিও সাবিনা ইয়াসমিন ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন, কিন্তু তিনি জানতেন না এটি চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হবে; আর এটি ছিল একটি সমবেত কণ্ঠে গাওয়া। এটাই ছিল প্রথম কোনো রেকর্ডিং সাবিনা ইয়াসমিনের।
‘আমার সোনার বাংলা’ প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে। এই গানে যারা কণ্ঠ দিয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন।
‘আমার সোনার বাংলা’ কিভাবে গাওয়া হলো সাবিনা ইয়াসমিনের।
জহির রায়হানই কি তাকে ডেকেছিলেন? এ প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আসলে জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রে আমি গেয়েছি ওই একটাই গান। 'আমার সোনার বাংলা'। হ্যাঁ, এটা পরবর্তীতে জাতীয় সংগীত হয়ে যায়। কিন্তু এটা রেকর্ড করা হয়েছিল আরো বেশ কয়েক বছর আগে। আর এই গান নিয়ে আমার জহির রায়হানের সঙ্গে কথা হয়নি।
কথা হয়েছিল খান আতার সঙ্গে। আমিও যতদূর জানি জহির রায়হান কথা কম বলতেন। আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে একবার। তেমন কথা হয়নি।’’
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এই গান জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রথম গাওয়া হয়। ১৯৭২ সালে মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা বিবেচনা করে এই গানটির প্রথম দশ চরণ সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হয়। এভাবেই সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া প্রথম গানটি হয়ে যায় জাতীয় সংগীত।
কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিনের প্লেব্যাকে অভিষেকেও জহির রায়হানের নাম কেন আসে? এর কারণ হলো, সেসময় জহির রায়হান অনেক ছবি নির্মাণ করতেন। কিন্তু নিজের নাম ব্যবহার করতেন না। তেমনই একটি চলচ্চিত্র আগুন নিয়ে খেলা। এই চলচ্চিত্রের সমস্ত গান দেখাশোনা করেছেন জহির রায়হান। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আমার প্রথম প্লেব্যাক ১৯৬৭ সালে। এটা জহির রায়হানের হাত ধরেই। ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে আমি প্রথম প্লেব্যাক করি। এই ছবির গানগুলো জহির রায়হান দেখাশোনা করেছেন।’’
‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে অন্যদের নাম থাকলেও এটা যে জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ও জহির রায়হান এমন অনেক চলচ্চিত্রই নির্মাণ করেছিলেন এবং যেসবে যে নিজের নাম ব্যবহার করেননি, সেটা সাবিনা ইয়াসমিনের কথাতেই স্পষ্ট হয়।
সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রথম প্লেব্যাকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আলতাফ মাহমুদের বাসা আমাদের বাসার পাশেই ছিল। তিনি আমার মাকে রাজি করালেন। তার আগে আমি ছোটদের গান করতাম। মা বললেন, আর কত ছোটদের গান করবি। এটা কর। তারপর গাওয়া হলো। দেড় মাসের মতো সে গানের খোঁজ পেলাম না। জানতেই পারলাম না গানটি ঠিকঠাক হয়েছিল কি না। কিন্তু দেড় মাস পর আলতাফ মাহমুদ হাজির হলেন। বললেন, ওই ছবির আরেকটা গান গাইতে। সেসময়ই তিনি বললেন যে, জহির রায়হান সাহেব গানটা খুব পছন্দ করেছেন। তিনি প্রশংসা করেছেন। আমি এ কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। গর্বে বুকটা ভরে উঠেছিল। আমি জানি না ছবিটি কে তখন পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু নেপথ্যে ছিলেন জহির রায়হান। আমি জহির রায়হানের বানানো চলচ্চিত্রের সাত থেকে আটটা গান গেয়েছিলাম।’-কালের কণ্ঠ