বিনোদন ডেস্ক: করাচির ওরাঙ্গি টাউনের এক সাধারণ যুবক সরফরাজ আলী। পেশায় একজন ডেলিভারি ম্যান। পিঠে খাবারের ব্যাগ ঝুলিয়ে প্রতিদিন শহরের ব্যস্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। জীবনের কঠিন বাস্তবতা, দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম আর অল্প আয়ের ভেতর দিয়েও থেমে থাকেননি তিনি। কারণ তার হৃদয়ে লুকিয়ে ছিল গায়ক হওয়ার এক অদম্য স্বপ্ন।
সেই স্বপ্নই এবার তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। পাকিস্তান আইডলের মঞ্চে মেহেদি হাসানের অমর গজল ‘তেরে ভিগে বদন কি খুশবু সে’ পরিবেশন করে সরফরাজ মুগ্ধ করেছেন হাজারো দর্শককে। তার কণ্ঠের আবেগ, সুরের গভীরতা আর আন্তরিক পরিবেশনা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেছেন নেটদুনিয়ার নতুন তারকা।
এক দশক পর আবারও ফিরছে পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীত প্রতিযোগিতা ‘পাকিস্তান আইডল’। দ্বিতীয় মৌসুম চলছে এবার। এই মৌসুমে বিচারক হিসেবে আছেন পাকিস্তানের চার তারকা উস্তাদ রাহাত ফতে আলি খান, অভিনেতা ফাওয়াদ খান, সংগীতশিল্পী জেব বঙ্গাশ এবং ব্যান্ড স্ট্রিংসের সদস্য বিলাল মকসুদ।
অডিশন পর্ব শুরু হয়েছিল সুক্কুর শহর থেকে, এরপর ক্রমান্বয়ে পৌঁছায় মুলতান, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদ ও করাচিতে। প্রতিটি শহরে শত শত তরুণ গায়ক-গায়িকা তাদের কণ্ঠে মাতিয়ে তুলেছেন বিচারক ও দর্শকদের। কেউ পরিবেশন করেছেন ধ্রুপদী গান, কেউ আঞ্চলিক লোকসংগীত। এমনকি অংশ নিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিযোগীরাও। তাদের সংগীতপ্রেম ছুঁয়ে গেছে সবার হৃদয়।
তাদেরই একজন সরফরাজ আলী। এবারের আইডলের মঞ্চে গান গাওয়ার আগে সরফরাজ জানান, তার বন্ধু ও ম্যানেজারই তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন পাকিস্তান আইডলে অংশ নিতে। যখন তিনি বলেন, মেহেদি হাসানের গজল গাইবেন তখন বিচারক বিলাল মকসুদ জানতে চান, ‘তুমি কি মনে করো এমন কিংবদন্তির গান তুমি গাইতে পারবে?’ জবাবে সরফরাজ বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
গান শুরু হতেই পুরো মঞ্চে নেমে আসে এক নীরব আবেশ। প্রতিটি লাইনে তার গলায় ফুটে ওঠে সত্যিকারের অনুভূতি। পরিবেশনার শেষে দর্শক ও বিচারকরা দাঁড়িয়ে করতালি দেন। বিলাল মকসুদ নিজে উঠে দাঁড়িয়ে সরফরাজকে দেন ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’।
সরফরাজ জানান, তার সংগীতচর্চার শুরু ঘর থেকেই। তার বাবা একজন লোকসংগীত ও গজলশিল্পী। বাবার কাছ থেকেই সংগীতের প্রতি ভালোবাসা ও গানের আবেগী প্রকাশ শেখা। তিনি বলেন, ‘আমি যখন গাই, তখন মনে হয় আমার আব্বার কণ্ঠের সুর আমার মধ্যেই বেঁচে আছে।’
প্রতিদিন মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে খাবার পৌঁছে দেন। আবার অবসরে গানের অনুশীলন করেন সরফরাজ আলী। জীবনের কঠোর পরিশ্রমই তাকে শিখিয়েছে ধৈর্য আর অধ্যবসায়। হয়তো সেই শক্তিই এখন তাকে নতুন এক পথে এগিয়ে দিচ্ছে।
পেশায় ডেলিভারি ম্যান হলেও সরফরাজ এখন করাচির মানুষের গর্ব। পাকিস্তান আইডলের মঞ্চে নিজের কণ্ঠে প্রমাণ করেছেন প্রতিভা কোনো বিলাসিতা নয়। এটা শ্রম, স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসের গল্প হয়ে সৌরভ ছড়ায়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে অনুষ্ঠানটি পাকিস্তানের সাতটি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেগুলো হলো জিও টিভি, পিটিভি, গ্রিন এন্টারটেইনমেন্ট, এক্সপ্রেস এন্টারটেইনমেন্ট, এপ্লাস, আওর লাইফ ও আন টিভি। এত দিন পর্যন্ত এটি শুধু পাকিস্তানেই অনলাইনে দেখা যেত, তবে এখন ‘বিগিন’-এর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অ্যাপে দেখা যাবে অনুষ্ঠানটি। তাছাড়া যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার দর্শকেরাও begin.watch ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শোটি উপভোগ করতে পারবেন।