বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৪০:২৬

জানেন মৃত্যুর আগেরদিন কাকে খুঁজেছিলেন সালমান শাহ?

জানেন মৃত্যুর আগেরদিন কাকে খুঁজেছিলেন সালমান শাহ?

বিনোদন ডেস্ক : খুব অল্প সময়ে অভিনয় দিয়ে মানুষের মনে দারুণ প্রভাব বিস্তারকারী অভিনেতা সালমান শাহ। এত অল্প সময়ে এমন জনপ্রিয়তা অর্জন এবং মৃত্যুর পরেও সেটা দীর্ঘদিন ধরে একই রেখায় থাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি বেড়ে যাওয়া—এমন শিল্পী সত্যিই বিরল। 

সালমান শাহ আসলে কেমন ছিলেন? তার সঙ্গে সবসময় দেখা যেত অভিনেতা তুষার খানকে। তার সঙ্গে ছিল বন্ধুতপূর্ণ সম্পর্ক।

সালমান শাহর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তুষার খান বলছেন, ‘সালমান শাহ আমার বয়সে ছোট ছিল, কিন্তু আমাদের মধ্যে অসম্ভব ভালো একটা বন্ধুত্ব ছিল। বড় ভাই, বন্ধু যাই বলেন না কেন ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। শেষেরদিকে দেখা গেছে একসঙ্গে ২৪ দিন আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। হয়তো ৫টা দিন অন্য ফিল্মে কাজ করছি।

সালমানের সঙ্গে হৃদ্যতা বেশ ভালো ছিল জানিয়ে তুষার খান বলেন, ‘আমরা কাজ করতাম রাত পর্যন্ত, এরপর ও ওর বাসায় চলে যেত, আমি আমার বাসায় চলে আসতাম। কখনো দেখা যেত ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে ও আমার বাসায় চলে আসতো। আমাদের প্রতিদিনই আড্ডা হতো। সালমানের সঙ্গে কত স্মৃতি আছে বলে শেষ করা যাবে না। ও অনেক ভালো একটা মানুষ ছিল। অনেকে বলে না, ভালো মানুষ বেশি দিন থাকে না, আসলেই তাই।’

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সালমান কত শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন- বিশ্লেষণ করে তুষার খান বলেন, ‘এত বছর হলো ও চলে গেছে, কিন্তু ফিল্মগুলো দেখলে মনে হয়তো এই তো সেদিনের ফিল্ম। এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা যখন সালমানের কথা বলে তখন সত্যি ভালো লাগে। হতো তখন জন্মও হয়নি কিন্তু সালমানকে ভালোবাসে।

তখনই বুঝতে হবে সালমান শাহ অভিনয় দিয়ে নিজের কোন জায়গাটা তৈরি করে নিয়েছে।’

সালমানের মৃত্যু প্রসঙ্গে তুষার বলেন, ‘সালমানের যখন মন খারাপ থাকতো তখন প্রায়ই আমার সঙ্গে কথা বলতো। আমাকে টেলিফোনে বলতো, আমার ভালো লাগছে না। আমি তোমার বাসায় আসব। ওর ফোন পেয়ে আমি কোথাও আর বের হতাম না। আমরা একসঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতাম। এতে অনেকেটাই ও ফ্রেশ অনুভব করত। পরদিন আবারও ফুরফুরে মেজাজে অভিনয় সেটে দেখতাম ওকে।’

তুষার আরো বলেন, “সালমান যেদিন মারা যায় তার আগের দিন আমি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরি। বিকেলে আমার আর ওর ‘প্রেমপিয়াসী’ সিনেমার ডাবিংয়ের কাজ ছিল। ডাবিংয়ে যাওয়ার আগে আমি আমেরিকা থেকে আনা একটি পার্সেল আমার আত্মীয়ের বাড়িতে দিতে যাই। আমি এত ক্লান্ত অনুভব করি যে, সে আত্মীয়ের বাড়িতে পার্সেল আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমিয়ে পড়ায় তারাও আমায় আর ডাকেনি।’’
 
মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সময় মনে করে তুষার বলেন, ‘আমার ঘুম ভাঙে রাত পৌনে ১১টায়। সেদিন আর ডাবিংয়ে যাইনি। পরদিন সকাল বেলা পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মেয়ে আন্নি আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, সালমান সুইসাইড করেছে। আমি তখন বিষয়টা মেনে নিতেই পারিনি। আন্নিকে আমি আবার বলি, ওকি মারা গেছে। আন্নি জানায়, হ্যাঁ, এখন মেডিক্যালে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে যাই।’

এরপরই আফসোস করে তুষার বলেন, ‘হাসপাতালে পরিচালক রেজা হাসমত আমাকে দেখে বলেন, কালকে আপনি কই ছিলেন? আমি বললাম কেন? তখন রেজা জানান, গতকাল ডাবিংয়ের সময় সালমান খুব আপসেট ছিল। আপনাকে অনেক খুঁজেছে। ফোন করেছে। ফোনে না পেয়ে আপনার বাসায় লোক পাঠিয়েছে।’

আফসোস করে এই অভিনেতা বলেন, ‘এমন কথা শোনার পর আমার প্রায়ই মনে হয়, ও হয়তো অন্যদিনের মতো আমার কাছে কিছু কথা শেয়ার করতে চেয়েছিল। হয়তো আমার সঙ্গে কথা বলার পর ওর মনটা আবার ফ্রেশ হয়ে যেত। এমন দুর্ঘটনা হয়তো ঘটত না। আমার এখন মনে হয়, আমি ওইদিন কেন আত্মীয়ের বাসায় ঘুমিয়ে পড়লাম! এই কষ্টটা আমার সারাজীবন থাকবে। হয়তো আমি সেদিন না ঘুমিয়ে পড়লে আজও আমাদের মাঝে সালমান শাহ থাকতো। এত দর্শকের মন ভেঙে যেত না!’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে