বিনোদন ডেস্ক : অনেকটা বাঘের মতোই গর্জন করে এসেছিলো কারিনা কাপুর ও অর্জুন কাপুর জুটির ছবি ‘কি অ্যান্ড কা’। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর অনেটাই বিড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে নেতিয়ে গেছে। অথচ এ ছবিটি নিয়ে অনেকেরই আশা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু বাস্তবে বুমেরাং। সেসব আশাই ভেস্তে গেছে ছবি মুক্তির পর।
অথচ গতে-বাঁধা একঘেয়ে ধারণাটাকেই সজোরে ঘা কষায় ‘কি অ্যান্ড কা’। একটি মেয়ে আর একটি ছেলের গল্প। গল্পকার আর বালকি। যিনি বরাবরই ছকভাঙা গল্প বলেন। এই ছবিতে যিনি যুক্তি-প্রতিযুক্তি সাজিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, সংসার যাপনের টিপিক্যাল ধারণাটা উল্টেপাল্টে গেলেও দুনিয়ার বিন্দুমাত্র ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না।
কিয়া (কারিনা কাপুর খান) উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ে। যে দু’চোখ ভরে স্বপ্ন দেখে সাফল্যের চূড়োয় পৌঁছনোর। আর তার জন্য মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করে। কিয়ার কাছে বিয়ে-সংসার-সন্তান কেরিয়ারের পথে ‘বাধা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। চণ্ডীগড়-দিল্লির বিমানে কিয়ার আলাপ হয় কবীরের (অর্জুন কাপুর) সঙ্গে। কথায় কথায় কবীর জানায়, সে তার মায়ের মতো ‘হাউসওয়াইফ’ হতে চায়। এবং মায়ের মতোই সংসার সামলানোটাকে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়।
অবাক হলেও কিয়ার ইন্টারেস্টিং লাগে কবীরকে। বিরাট বড় ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে আর বিজনেস স্কুলের টপার হওয়া সত্ত্বেও ‘হাউজ হাজব্যান্ড’ হতে চাওয়া কবীরের প্রেমে পড়ে যায় কিয়া। অল্প সময়ের মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব এবং মালাবদল। ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে অবাক করে দিয়ে মঙ্গলসূত্রটাও নিজের গলায় পরে নেয় কবীর!
এরপর শুরু হয় উলটপুরাণ। কিয়া আর তার মায়ের (স্বরূপ সম্পত) সঙ্গে থাকতে শুরু করে কবীর। ঠিক যেমনটা চেয়েছিল, তেমনভাবেই গুছিয়ে সংসার পেতে বসে সে। কবীরের পছন্দের রেলগাড়ি থিমে সেজে ওঠে তাদের হোম ডেকর। ছোট্ট টয় ট্রেনে চেপে খাবার টেবিলে স্ত্রী আর শাশুড়ির জন্য রোজ সময়মতো হাজির করে ব্রেকফাস্ট-ডিনার। আর্থিক সংকটে ঘরোয়া জিম খুলে উপার্জন করতেও দ্বিধাবোধ করে না কবীর। হোম লোন নেওয়ার সময় পাশে দাঁড়ায় স্ত্রীয়ের। একে অপরের জায়গা নেওয়ার বদলে নিজেদের মতো করে হয়ে ওঠে একে অন্যের পরিপূরক।
এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে এরপর স্ক্রিপ্টের নিয়ম মেনে গল্পে অবশ্যম্ভাবী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ‘ইগো’ নামক বিষম বস্তুটি। স্বামী যে তার উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল, সে কথা প্রকাশ্যে বলতে কুণ্ঠাবোধ হয় কিয়ার। তার নিজের কেরিয়ার প্রবল সম্ভাবনাময়। তাই অফিসে মিথ্যে বলে সে, যে কবীর একজন লেখক। পরে অবশ্য কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে সকলের সামনে সত্যিটা বলেই দেয় কিয়া।
কিয়া-কবীরের মধ্যে সব ঝামেলাই খুব তাড়াতাড়ি মিটে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বদমেজাজি কিয়া কবীরের উপর যতই রাগ দেখাক না কেন, শেষ পর্যন্ত মাথা ঠান্ডা রেখে সবটা সামলে নেয় কবীর। সন্তানসম্ভাবনার আশঙ্কায় কিয়া যখন ফুঁসছে, কবীর অম্লানবদনে এনে হাজির করে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট!
তবে আর পাঁচজন স্বামীর মতোই কবীরও স্ত্রীকে নিয়ে ‘পজেসিভ’। দিল্লির রাস্তায় দুষ্টু লোকেরা ফাঁকা বাস থেকে কিয়াকে টোন-টিটকিরি কাটলে কবীর তাদের তুলোধনা করে। কবীরের এই ‘ধর্মেন্দ্রওয়ালা সাইড’এর প্রশংসা করে কিয়া! আর এখানেই কোথাও গিয়ে ধাক্কা খায় ছবির ‘মেসেজ’। যেহেতু ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরটা দিল্লির জন্য এখনও কালো।
যে ‘ইগো’র কথা হচ্ছিল, সেখান থেকেই সমস্যার শুরু। একটা সময়ের পর কবীরের অভিনব ‘লাইফস্টাইল’ তার পরিচিতি বাড়াতে শুরু করে। তাতেই কিয়ার ঈর্ষা হয়। সকলের নজর তার উপর থেকে সরে গিয়ে ‘নিষ্কর্মা’ স্বামীর উপর গিয়ে পড়ায় সহ্য করতে পারে না সে। দর্শকের মনে পড়ে অমিতাভ-জয়ার ‘অভিমান’।
অবশ্য বলিউডের ফার্স্ট কাপল সশরীরেও ছবিতে উপস্থিত। নাম-ভূমিকাতেই। এবং সেই অংশটুকু সত্যিই বাড়তি পাওনা। ‘কি অ্যান্ড কা’ শুধু রোল রিভার্সালের গল্প বলে না। বরং বলা যায়, কী করে একসঙ্গে ভাল থাকতে হয়, সেটা শিখিয়ে দেয়। শেখানোটা অবশ্য একেবারে হাতে ধরেই সেরেছেন পরিচালক। ছবির প্লট একমুখী। সাবপ্লটের বৈচিত্রও নেই। আর সারা ছবি জুড়ে বার্তা দিতে চাওয়ার উদ্দেশ্যটাও খুব স্পষ্ট। চিত্রনাট্য তীক্ষ্ণ এবং গভীর হলে হয়তো পুরো ছবিটা আরও অর্থবহ হয়ে উঠতে পারত। দাগ কেটে যেতে পারত দর্শকের মনে।
অর্জুন-কারিনার পরদা-রসায়নটাও ঠিক জমল না। কিয়ার চরিত্রে করিনা খুবই ভাল। তার পাশে কিছুটা ফিকে লাগে অর্জুনের অভিনয়-অভিব্যক্তি। অর্জুনের বাবার চরিত্রে রজিত কপূরকে ভাল লাগে। একজন পাক্কা ব্যবসায়ীর মতো তাঁর চরিত্রটিও উত্তরাধিকারীর খোঁজে ব্যস্ত। করিনার মায়ের ভূমিকায় স্বরূপ সম্পতও ভাল। অনেকদিন পর এঁদের পরদায় দেখে ভাল লাগে।
ইলাইয়ারাজার সংগীতও মনে রাখার মতো কিছু নয়। যদিও ‘হাই হিল্স’ ইতিমধ্যেই বেশ হিট গান। চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা সবকিছুই বেশ দৃষ্টিসুখ দিয়েছে। তবে আর বালকির স্টিরিওটাইপ ভাঙার এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও ছাপ ফেলার পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে পারল না ‘কি অ্যান্ড কা’।
৪ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন