বিনোদন ডেস্ক : জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন চমক নিয়ে আসে। নন্দিত উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় নির্মিত অনুষ্ঠানটির এবারের পর্বেও তেমনটার ব্যত্যয় ঘটেনি। এবারের পর্বের মূল আয়োজন ধারণ করা হয়েছিল চাঁপাই নবাবগঞ্জে হর্টিকালচার সেন্টারের অভ্যন্তরের আম্রকাননে। ইতিহাসসমৃদ্ধ এ জায়গাটিতে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।
শুধু তাই নয়, আমাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের সিদ্ধান্তও হয়েছে আমতলাতে। ইত্যাদির কল্যাণে জায়গাটিতে রচিত ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানা গেছে। এবারের ইত্যাদির ধারণস্থানের আমবাগানকে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। যা দৃষ্টি কেড়েছে দর্শকদের। শেকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে বরাবরের মতো এবারও ছিল কয়েকটি হৃদয়ছোঁয়া প্রতিবেদন। এর মধ্যে ফজলে রাব্বী রবিন নামে এক যুবকের সর্পপ্রীতির উপর সচেতনতামূলক প্রতিবেদনটি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই সাপ দেখে ভয় পান। কিন্তু রবিন ভয় পান না। বরং, যেখানেই সাপ দেখেন সেটিকে হাতে নেন।
এমনকি সযত্নে সাপকে তার আবাসস্থল বনে ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয়, কোনো সাপ যদি অসুস্থও থাকে সেটাকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে সারিয়ে তোলেন। এমনই ভিন্ন ধরনের একটি প্রতিবেদন দেখা গেছে এবারের ইত্যাদিতে। তবে সবেচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ছিল খুলনার ফুলতলা উপজেলার প্রচারবিমুখ, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ, শিক্ষানুরাগী মানুষ কুতুবুদ্দিন আহমেদের উপর করা শিক্ষামূলক প্রতিবেদনটি।
এতে দেখা যায়, শিক্ষানুরাগী ওই মানুষটি মানুষের কল্যাণে কত কি করেছেন। দেশের একাধিক জায়গায় কুতুবুদ্দিন স্কুল নির্মাণ করেছেন। সে সঙ্গে সেসব স্কুলের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও পালন করছেন নিয়মিত। কুতুবুদ্দিন শুধু স্কুল নির্মাণই করেননি। তার তত্ত্বাবধানে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। কুতুবুদ্দিনকে নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি দারুণভাবে দর্শকের হৃদয়ই শুধু ছোঁয়নি। মানবিক আবেদনের অনবদ্য এক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে।
এদিকে এবারের ইত্যাদির বিদেশি প্রতিবেদন করা হয়েছে চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলার নবাবদের আবাসস্থল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। এ প্রতিবেদনে নবাবদের নানান বিচিত্র ঘটনা তুলে ধরেছেন ইত্যাদির প্রাণপুরুষ হানিফ সংকেত। এবারের আয়োজনে চাঁপাই নবাবগঞ্জকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা ও হানিফ সংকেতের সুর করা ‘চাঁপাই চাঁপাই’ গানটির সঙ্গে স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচটি ছিল বেশ নান্দনিক।
এছাড়া বক্তব্যধর্মী মিউজিক্যাল ড্রামাটিও ছিল এবারের আয়োজনের অন্যতম আরেক আকর্ষণ। এতে বিভিন্ন অফিসের কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে। এ আয়োজনে প্রাণ রায় ও জয়রাজের অভিনয় ইত্যাদির দর্শককে মুগ্ধ করে। দর্শক পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের নিয়ে করা হয়েছে ২য় পর্ব। এ পর্বের জন্য চাঁপাই নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। গম্ভীরা শিল্পী মাহাবুবুল আলম ও ফাইজুর রহমান মানির চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং লোকসংগীত নিয়ে গম্ভীরা পরিবেশন ছিল দৃষ্টিনন্দন।
নিয়মিত পর্ব হিসেবে যথারীতি এবারও ছিল উপভোগ্য মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি পর্ব ও চিঠিপত্র বিভাগ। ছিল সমসাময়িক ঘটনা ও সামাজিক অসঙ্গতিকে ঘিরে বেশ কিছু সরস অথচ তীব্র কটাক্ষপূর্ণ নাট্যাংশ। যেগুলো ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে বরাবরের মতো এবারও আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় একটি ‘ইত্যাদি’ উপহার দেয়ার জন্য নির্মাতা হানিফ সংকেতকে ধন্যবাদ। সে সঙ্গে সাধুবাদ এর স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেডকে এমন একটি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাওয়ার জন্য। -এমজমিন
১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস