রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০৯:০১

ভারত নয়, ভাগ হয়েছিল আমাদের বাংলা : গৌতম ঘোষ

ভারত নয়, ভাগ হয়েছিল আমাদের বাংলা : গৌতম ঘোষ

বিনোদন ডেস্ক : ভারত নয়। ভাগ হয়েছিল আমাদের বাংলা। বাঙালিকে দু’‌টুকরো করে দেওয়া হয়েছিল। একক বাংলাকে ‘‌এপার বাংলা’‌, ‘‌ওপার বাংলা’‌ হিসেবে চিহ্নিত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল কাঁটাতার। বাঙালির বুক এফোঁড়–‌ওফোঁড় করে। ভাগ হয়ে যাওয়ার সেই বেদনারই স্মৃতি থেকে বাংলায় আজও গুমরে কাঁদে দুটো শব্দ ‘‌দেশভাগ’‌ আর ‘‌উদ্বাস্তু’‌।

যে যন্ত্রণাই ক্যামেরাবন্দি হয়েছে আমার সাম্প্রতিক ছবি ‘‌শঙ্খচিল’‌–‌এ। এমনই আবেগ তাড়িত কথাগুলো বলেছেন দেশভাগের উপর নির্মিত সিনেমা ‘শঙ্খচিল’ নির্মাতা গৌতম ঘোষ।

আমেরিকায় বাঙালির মিলনমেলা এখানেই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাধা নেই, দূরত্ব নেই, ভূগোল, রাজনীতির গণ্ডি টপকে সব বাঙালিই মিলেমিশে একাকার এক সামিয়ানার নিচে— এর চেয়ে ভাল দৃশ্য বাঙালির কাছে আর কী হতে পারে?‌

বহুদিন ধরে এন এ বি সি–‌র সম্মেলনে আমি যাচ্ছি। আসলে শুধু আমেরিকার কোনও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যাচ্ছি, এমনটা ভাবি না। আমি যাচ্ছি বিশ্বের বাঙালির এক মিলনক্ষেত্রে। যেখানে আমেরিকার নানা প্রান্তের বাঙালি শুধু নয়, বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর বাঙালি অংশ নিচ্ছেন।

ভারত‌সহ বিভিন্ন দেশের বাঙালিরাও ছুটে আসছেন সেখানে। দুর্ভাগ্যক্রমে বাঙালিদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, ভাগ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে এ যেন এক জোরালো আওয়াজ। এ যেন এক প্রতিবাদী মঞ্চ। অসংখ্য প্রতিভাবান ছেলেমেয়েকেও আমি দেখেছি ওখানে।

যারা নাচ, গান, আবৃত্তির মতো সব কলাক্ষেত্রেই বেশ পারদর্শী। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় এরা ঠিকমতো রেওয়াজ করতে পারে না হয়ত, কিন্তু তার মধ্যেও এরা যেভাবে তৈরি হয়ে নিজেদের মঞ্চে হাজির করে, তার জন্য ওদের ধন্যবাদ, উৎসাহ দিতে হবে, যাতে ওরা আরও এগিয়ে যেতে পারে। লাস ভেগাস, নিউ ইয়র্কের মতো বহু শহরে দেখেছি স্থানীয় বাঙালিদের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলো কত শক্তিশালী!‌

কোনও অংশেই ওরা কলকাতার চেয়ে পিছিয়ে নেই। বাংলা সিনেমারও নিয়মিত দর্শক রয়েছেন এদের মধ্যে। প্রচুর বাংলা ছবি ওরা দেখেন। সে সব নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, বাংলা ছবির বাণিজ্যিক প্রদর্শন আমেরিকায় এখনও সেভাবে হয়নি। অথচ এর প্রচুর চাহিদা আছে। অন্যান্য কিছু ভারতীয় ভাষায় ছবি ওখানে দেখানো হয়। দর্শকও আসেন।

আমি তাই প্রস্তাব দিয়েছি, স্থানীয় বাঙালি উদ্যোগপতিরা পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসুন, যাতে লাভ হবে দু’‌পক্ষেরই। আগে আমার ‘‌মনের মানুষ’‌ নমো নমো করে এখানে রিলিজ করেছে রিলায়েন্স। ‌‘‌শঙ্খচিল’‌ আমেরিকাতে অবশ্য বড় করে মুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে জি। দেখা যাক, এই উদ্যোগ কতটা সফল হয়। এক সময় যে সব বাঙালি নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে ঠাঁই গেড়েছিলেন, তাদের তখন ইচ্ছে ছিল বাঙালিত্ব ছেড়ে আমেরিকান হতে হবে।

ওদের মতো চলনবলন, ভাষা–‌সংস্কৃতি শিখতে হবে। যাতে কেউ আর তাদের বাঙালি বলে চিনতে না পারে। সন্দেহ নেই, সে সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। একটা সময়ে অবশ্য বোধোদয় হল যে সেটা ভুল ছিল, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর ছিল। তাই বাংলা আবার ওরা সাদরে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। বাঙালির এই মিলনক্ষেত্র সেই চেষ্টারই একটা দিক।

আমেরিকার চীনাদের কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়েছে। ওরা আমেরিকায় বেশ প্রতিষ্ঠিত। আমেরিকান আদব–‌কায়দা, কথাবার্তা— সবটাই কাজের প্রয়োজনে রপ্ত করে নিয়েছেন। অথচ যখন ওরা নিজেদের পরিমণ্ডলে, তখন কিন্তু নিজস্ব ভাষা ছাড়া কথা বলেন না। ওদের কাছ থেকে এটা অবশ্যই শিখতে হবে। আমেরিকার বাঙালি এই বিশ্ব বাঙালি হয়ে ওঠার ডাক দিকে দিকে ছড়িয়ে দিক। আদর্শ বাঙালির মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক আমেরিকার মাটি।‌‌
৩ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে