বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৫৪:১৭

'লক্ষ্মী ভাবীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম, ভাবী আমার দ্বারা হবে না'

'লক্ষ্মী ভাবীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম, ভাবী আমার দ্বারা হবে না'

তামিম হাসান: যশোরের ফরিদা আখতার পপি নামে এক কিশোরী, যার চলচ্চিত্রে নাম রাখা হয় ববিতা। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই মানুষটি হয়ে উঠেছেন বাংলা সিনেমার রাজকন্যা।

আপনাকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।
সবাইকে ঈদ মোবারক । ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক আনন্দের বার্তা।
আপনার অভিষেক নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে। মোট ছবির সংখ্যা হিসাব করলেও নায়করাজের সাথে আপনার কাজ বেশি। এ নিয়ে কিছু বলুন।
রাজ্জাক ভাই এসেছেন জহির ভাইয়ের হাত ধরে, আমিও এসেছি। আমি বেণী দোলানো কিশোরী আর রাজ্জাক ভাই টগবগে যুবক। প্রথমে সংসার ছবিতে অভিনয় করতে বলা হয়েছে। ছবিতে রাজ্জাক ভাই বাবা ছিলেন আর সুচন্দা আপা ছিলেন মা। তো ওই ছবিটা করেছি। রিলিজ হলেও ছবিটা তেমন চলেনি। তখন ভেবেছিলাম এই ছবিটা করার পর আর কোনো ছবি করব না। এরপর জহির ভাই বললেন, ববিতাকে নায়িকা করে আরেকটা ছবি বানাব। ছবিটা হচ্ছে ‘শেষ পর্যন্ত’।
প্রথম যখন শুটিং হচ্ছিল তখন খুব আনইজি ফিল করছিলাম কারণ এই কয়দিন আগেই রাজ্জাক ভাইকে বাবা ডাকলাম এখন আবার রোমান্টিক দৃশ্য। আমি পারছিলাম না, খুব আনইজি ফিল করলাম। তো জহির ভাইয়ের খুব বকা খেলাম। তিনি বললেন, এটা কি সত্যি নাকি এটা তো অভিনয়। পরে বকা খেয়ে ঠিক করে ফেলেছি। ওই ছবিতে এত মিষ্টি ডায়লগ, এত সুন্দর গান আর এত সুন্দর গল্প ছিল যে পরে আর না করতে পারিনি যে, আমি আর ছবি করব না। আর রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমাদের আপনজন, পরিবারের সদস্যের মতো। আমি সৌভাগ্যবান যে আমি উনার সাথে অনেক ছবি করতে পেরেছি।
নায়করাজ আপনার পরিচালক ছিলেন, আপনার অভিনেতা ছিলেন এবং অভিভাবকসুলভ একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তবে আপনার বায়োগ্রাফি পড়ে জানলাম বিয়ের দিন আপনি ওনার বাসায় চলে গিয়েছিলেন...
এই কথাও এখনকার ছেলেরা জানে!! কথা যখন উঠল বিষয়টা খুলে বলি। আমার বাবা মৃত্যুশয্যায় ছিলেন। ওই সময় বাবা বললেন, মা আমি মৃত্যুর আগে তোমার বিয়েটা দেখে যেতে চাই। তোমার যদি কাউকে ভালো লাগে তো বলো আর না হলে আমরা সবাই দেখি। তো সুচন্দা আপা, আমার দুলাভাইসহ সবাই খোঁজ করে অনিকের আব্বা মানে আলম সাহেবের সাথে বিয়ে ঠিক করে। তো যে দিন বিয়ে হবে বাবা মৃত্যুশয্যায়। ওখানে আমার বর বা উকিল বাপটাপ সবাই আসবেন। ওইখানে বিয়েটা হয়ে যাবে আর রাতে আমি সব জার্নালিস্টকে দাওয়াত দিলাম সোনারগাঁও হোটেলে।
কিন্তু কী ব্যাপার সেটা বলা হবে না। তো সবাই দেখল যে কী ব্যাপার গিয়ে দেখি কী হয়। যে দিন বিয়ে হবে সে দিন হলো কী- আমি ভাবলাম আচ্ছা যেহেতু বিয়ে করছি আমার বিয়ের জীবনটা যদি সুখের না হয়, ভালো না হয় তাহলে কী হবে। তো এ রকম কিছু চিন্তাটিন্তা মাথায় এলো। সকালবেলায় বরপক্ষ আসবে দশটা-এগারটার দিকে। তো আমি কী করলাম, পেছনের দরজা দিয়ে গাড়ি নিয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির। তো ফিল্ম লাইনের কেবল রাজ্জাক ভাই আর লক্ষ্মী ভাবীই জানতেন যে, আজকে ববিতার বিয়ে হচ্ছে আর কেউ জানতেন না। তার মানে দেখেন রাজ্জাক ভাই আমার কতটা আপন। রাজ্জাক ভাই বললেন, ববিতা আজ তুই এখানে কেন? তো আমি লক্ষ্মী ভাবীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম, ভাবী আমার দ্বারা হবে না। আমার ভয় লাগছে। আমি পারব না। তারপর রাজ্জাক ভাই ও ভাবী আমাকে বুঝিয়েসুজিয়ে বলল- প্রথমে একটু ভয়টয় লাগবেই, পরে ঠিক হয়ে যাবে। পরে বলল, এই লক্ষ্মী তুমি নিজে ববিতাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসো। তারপর ভাবী আমাকে নিয়ে এলেন।
আপনার বিখ্যাত ছবি, আলোর মিছিল (১৯৭৪ সালের ছবি) এ ছবিতেই আপনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই ছবি নিয়ে কিছু বলুন।
পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতার মতো এত বড় একজন মানুষ আমার কাছে এলেন এবং গল্পটা যখন বললেন তখন গল্পটা শুনে দারুণ লাগল। তখন একটা সমস্যা হলো যে, আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী বলল যে, তুমি এই ছবিটা করো না। আমি বললাম কেন? তারা বলল যে রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে তুমি রোমান্টিক ছবি করো কিন্তু এখানে রাজ্জাক ভাই তোমার মামা হবে আর তুমি হবে ভাগ্নি। এটা কিন্তু তোমার ক্যারিয়ারের জন্য সমস্যা হয়ে যাবে। কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে দেখলাম গল্পটা এত সুন্দর এত ভালো যে, সিদ্ধান্ত নিলাম যে যা-ই বলুক না কেন আমি এই ছবিটা করব। সিনেমা রিলিজ হওয়ার পর সিনেমা হলে দর্শকদের হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। যখন আলো মারা গেল, যখন রাজ্জাক ভাই রোজী ভাবীকে গিয়ে বলছে আলোকে দাফন-কাফন করা হবে আসো। তখন পরিচালক শর্ট নিয়েছেন এমন যে, একটা ফটোর ওপর চার্জ হচ্ছে। এই যে ওইখানে যখন চার্জ হয়েছে তখন দর্শকেরা হুহু করে কেঁদে ফেলেছে।
তখনকার সময়ে টাকা আনা পাই ছবি নাকি অনেক সাড়া ফেলেছিল?
এটা অসাধারণ একটি ছবি। এই ছবি মুক্তির পর টিনএজ ছেলেমেয়েরা ববিতার এত ভক্ত হয়ে গেল যে বলার বাইরে। আর জহির ভাই গল্পটা এমন করে নির্মাণ করেছিল ‘ঐ ছোট্ট একটা মেয়ে, মাথায় হালকা পাতলা ছিট আছে, বড় লোকের মেয়ে, যে রাজ্জাক ভাইকে গিয়ে বলছে- হ্যাঁ তোমাকে পাখি ধরে দিতে বলেছিলাম দাওনি- আবার আমার বাড়িতে বসে বসে চা খাচ্ছ? লজ্জাও করে না! এই যে মজার মজার ডায়লগগুলো, এগুলোতে লোকে খুব মজা পেয়েছিল। রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে অসংখ্য ভালো ছবি করেছি। তো আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। রাজ্জাক ভাই তো আমাদের চলচ্চিত্র জগতের একটা ইনস্টিটিউশন। রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে কাজ করতে কী যে ভালো লাগত। উনি সব সময় গাইড করতেন- এই তোমার অভিনয় ঠিক হচ্ছে না। এভাবে করো। এখানে এ রকম করো, ওখানে ওরকম বলো- এই যে জিনিসগুলো এভাবেই তো শেখা আমাদের। আমি গর্বিত যে রাজ্জাক ভাইয়ের নিজের প্রোডাকশন রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের ম্যাক্সিমাম ছবির নায়িকা আমি ছিলাম। আরো বড় কথা রাজ্জাক ভাইয়ের নিজের ডাইরেকশনের যে ছবি ‘অনন্ত প্রেম’ সেটারও নায়িকা আমি। সেটা যে কী সুন্দর!
আপনি নিজেও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় একটি সম্পদ। এখন পর্যন্ত আপনি আপনার রূপ-লাবণ্য ধরে রেখেছেন- এটা কী করে সম্ভব?
- এই যে বলাটা, সেটা তো সবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আর আমি তো সবার ভালোবাসা নিয়েই ববিতা। এই যে যারা আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন, পথচলা শিখিয়েছেন তাদের কথা আমি ভুলতে পারব না। তাদের জন্যই আজকে আমি ববিতা হতে পেরেছি।
‘বাঁদী থেকে বেগম’ চলচ্চিত্রে আমরা তিনটি রূপে আপনাকে দেখেছি। এই ছবিটা নিয়ে কিছু বলুন।
- আপনারা যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমার প্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম প্রিয় ছবি। এই ছবির জন্য রাজ্জাক ভাইও ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এবং ববিতাও ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তো ওখানে আমার তিন ধরনের চরিত্র। ওই যে কখনো আমি নর্তকী কখনো আমি বাঁদী কখনো আমি বেগম। বিখ্যাত ‘বাঁদী থেকে বেগম’ ছবিটি লিখেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় আহমেদ জামান ভাই এবং আমার জীবনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে আহমেদ জামান ভাই আমাকে অনেক আগলে রেখেছেন। আহমেদ জামান খোকা ভাই, অবশ্যই উনার নাম ভুলব না। আজ উনি আমাদের মাঝে নেই। তো ওই ছবির তিনি প্রডিউসারও ছিলেন। তো ওই ছবিতে আমি যখন নর্তকী হলাম তখন আমাকে পিওর ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্স করতে হবে। আমি কিন্তু ড্যান্স জানি না।
কিন্তু ছবিটা তো আপনি করেছিলেন।
- সেটাই আমি বলতে চাইছি। তো শুটিংয়ের ফাঁকে যে এক-দেড় ঘণ্টা সময় থাকে সে সময়ে গওহর জামিল, রওশন জামিল যেখানে থাকেন সেখানে গিয়ে ‘ধা-ধিন ধিন তা’ এসব করতাম এবং এত সুন্দর করে শিখেছিলাম যে শিখতে গিয়ে আমার পায়ে ফোঁসকা পড়ে গিয়েছিল; কিন্তু যখন ছবিটি রিলিজ পেল তখন রিয়েল ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সাররা মনে করল ববিতা বোধ হয় রিয়েল ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সার; কিন্তু আই অ্যাম নট ক্ল¬্যাসিক্যাল ড্যান্সার। এই যে আমাদের চেষ্টাটা। মানুষ যেন বুঝতে না পারে যে ববিতা নাচ পারে না।
চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ সত্যজিৎয়ের চোখ আপনাকে আবিষ্কার করেছিল। এই গল্পটা শুনতে চাই।
- তখন আমি গেন্ডারিয়ার বাড়িতে থাকি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। তো দেখি এক ক্যামেরাম্যান এফডিসিতে খুব ছবি তুলছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম উনি কে? সবাই বলল যে, উনি ভারত থেকে এসেছেন। রাজ্জাক ভাইয়ের বাড়িতেও কিছু ছবি তুলছে। এর কিছু দিন পর একটা চিঠি এসেছে। বলছে যে সত্যজিৎ রায় তোমাকে নিয়ে ভাবছে। তুমি চিন্তা করতে পার। চিঠিটা পেয়ে আমি হাসতে হাসতে সোফায় বসা থেকে মাটিতে পড়ে গিয়েছি। আমি কে না কে। কেউ চেনে না। সত্যজিৎ রায় ওখানকার কত বড় পরিচালক। ওখানকার কত বড় বড় আর্টিস্ট। ওদের বাদ দিয়ে আমাকে কেন নেবে। কেউ দুষ্টুমি করেছে ভাবলাম। অনেক ভক্তরা থাকে না এ রকম। তো তার কিছু দিন পর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকে ফোন এসেছে। তুমি কি ব্যাপারটা দেখছো না। উনি কিন্তু তোমাকে চিঠি দিয়েছে তুমি ব্যাপারটা দেখ। তো প্রযোজক নন্দন ভট্টচারী যোগাযোগ করলেন। উনি বললেন যে তুমি কি ইন্ডিয়ায় আসতে পার। উনি তোমাকে সরাসরি দেখতে চান। পরে আপাকে বললাম। আপা তো বেশ উত্তেজিত। পরে আমরা ইন্ডিয়ায় গেলাম। তো ইভনিংয়ে উনার বাড়িতে যাবো। তো আমার ম্যাকআপ বক্সে যত ম্যাকআপ ছিল সব দিয়ে সেজেগুজে সুন্দর করে গিয়েছি। এত বড় পরিচালক দেখবে আমাকে সুন্দর করে যেতে হবে না। তাই অনেক সেজেছি। সেজে টেজে গেলাম। তো আমরা গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম ভেতর থেকে এক লম্বা লোক বেরিয়ে এলেন। উনাকে একবার দেখে আমি নিচু হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আর তাকাতে পারছিলাম না। তারপর উনি বসালেন। আমি তো তখনো নিচু হয়ে আছি। উনি বলছেন যে, এত লাজুক মেয়ে। আর আমাকে বলছে যে, তুমি এত মেকআপ করে এসেছো কেন। তোমাকে তো এই মেকআপ-এ দেখতে চাইনি। তো আমি তো আরো ঘাবড়ে গেলাম। তারপর উনি সুচন্দা আপাকে বললেন ও এত লাজুক ও কি অভিনয়-টভিনয় পারবে? আপা বলল যে, ও তো বাংলাদেশে দু-তিনটি ছবি করেছে। খুব সুনাম হয়েছে। তো উনি বললেন তুমি আগামীকাল ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে আসবে। কোনো ধরনের মেকআপ ছাড়া। তো আমি গেলাম ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে। উনি বললেন যে, তোমাকে তো আজকেও সুন্দর লাগছে। মেকআপ ছাড়াই তো তুমি সুন্দর। তারপর মেকআপম্যানকে বললেন ও আটপৌরে শাড়ি পরবে, সিঁথিতে সিঁদুর থাকবে, ঘোমটা থাকবে আর কোনো মেকআপ না। লাইট টাইট অন। আমার টেস্ট শুরু হলো। আমাকে বললেন তুমি একটার পর একটা সংলাপ বলতে থাকো। তখন আমি আরেক ববিতা। তখন আমার লাজলজ্জা ভয় কোনো কিছুই নেই। আমি নানা চেষ্টাটেষ্টা করছি। উনি লুক থ্রো করে দেখে বুঝলেন এই মেয়ের তো সাংঘাতিক চেষ্টা আছে, এই মেয়ে তো ভালো। এত আরেক মেয়ে। ও কালকে কী ছিল আজকে কী দেখছি। উনি বললেন ইউরেকা। আমি অনঙ্গ বউ পেয়ে গেছি। কোথায় তোমার দিদি। সুচন্দা, সুচন্দা, এই হবে আমার ছবির অনঙ্গ বউ। আমি নিজেকে চিমটি কেটে বলছি- এটা কী সত্যি নাকি মিথ্যে।
নিজের বাবা-মায়ের দেয়া নাম চলচ্চিত্রে এসে মুছে গেছে এর জন্য কি দুঃখবোধ হয়?
- কিছুটা তো হয় অবশ্যই, তবে সেটা এখন আর তেমন হয় না। কারণ এই নাম নিয়ে কিন্তু আমার বাবা-মায়ের তেমন কোনো আপত্তি ছিল না। তাই সবাই যখন নামটি মেনে নিয়েছিলেন, আমি তা মনে নিয়ে নিই। মনে মেনে নিয়েই নিজেকে ববিতা নামেই দাঁড় করাই। আসলে নাম একজন মানুষের জীবনে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। মানুষের নাম মাত্রই সুন্দর। তবে তার সেই নাম তার কাজের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি সুন্দরে পরিণত হয়। কাজের গুণেই তো মূলত মানুষের আসল পরিচয় ঘটে।
আপনার মা তো ছিলেন একজন ডাক্তার...
- আমার মা যশোরে গ্রামে থেকেও কলকাতা লেডি ব্রেবোন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। আমার বাবার সাথে মায়ের পূর্বপরিচয় থাকলেও পারিবারিকভাবেই দু’জনের বিয়ে হয়েছে। তবে আমার মায়ের অনেক গুণ ছিল, খুব সংস্কৃতিমনা ছিলেন তিনি। আমার বোন জেলীর অকস্মাৎ মৃত্যুর কারণেই কিন্তু পরে মা পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়েছিলেন। তাই যদি বলা হয় তার ডাক্তার হওয়ার অনুপ্রেরণা কে? উত্তর ওই একটাই- আমার বোন জেলি। মায়ের সেই আদর্শকে জীবনে অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম আমি। হতে চেয়েছিলাম একজন ডাক্তার। কিন্তু সেই ইচ্ছের পথে আমি যেন আর পা ফেলতে পারিনি।
শেষ প্রশ্নে জানতে চাই আপনার বাকি জীবনের পরিকল্পনার কথা...
- নাহ্, সেভাবে কোনো পরিকল্পনা নেই বাকি জীবন নিয়ে। যশ-খ্যাতি সবই তো পেলাম। বেঁচে আছি, বেশ ভালো আছি, মহান আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। চলচ্চিত্রে অনেক দিন কাজ করছি, আজীবন কাজ করে যেতে চাই। কারণ আমি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি। ভালোবাসি চলচ্চিত্র পরিবারের সবাইকে, ভালোবাসি এ দেশের মানুষকে। তবে এখন সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। একটা কথা না বললেই নয়, এখন আর বিশেষ কোনো দিনে কোনো পার্টি করতে ইচ্ছে হয় না। মনটা ভীষণ টানে দুস্থ-অসহায়দের জন্য।
জীবনের প্রত্যাশার বিপরীতে ববিতার প্রাপ্তি অনেক, তাই সেই প্রাপ্তির পর থেকে এই সময়ের ববিতা যেন এক অন্য ববিতা, যার চিন্তা চেতনায় এখন শুধুই সমাজের মানুষকে নিয়ে চিন্তা, দেশকে নিয়ে নতুন এক ভাবনার দিগন্তে ছুটে চলা। যে ছুটে চলায় ববিতা নিজের প্রাণের মাঝে এক অন্য রকম ভালো লাগা খুঁজে পান। ভুবন ভোলানো হাসির চিরসবুজ নায়িকা ববিতার সেই সে শুরুর স্নিগ্ধ হাসি যেন আজো তার ঠোঁটের কোণে জেগে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। এ যেন আমাদের চিরদিনের চিরচেনা ববিতা।-নয়াদিগন্ত
৭ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে