শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৫৯:০৫

'হিরো আলমের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না'

'হিরো আলমের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না'

বিনোদন ডেস্ক : হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড়ের বেগে পরিচিতি লাভ করেন ‘হিরো আলম’ নামে এক সহজ-সরল ছেলে। ফেসবুকের ওয়াল জুড়ে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ একটি নাম। এরই মধ্যে হিরো আলমের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। আর তাতেই তিনি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের খ্যাতনামা তারকাদের সাথে তার ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এইতো কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং তাসকিন আহাম্মেদের সাথে তার ছবি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই নিয়ে অনেক মিডিয়ায় সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঠাট্টা-মশকরাও যেন কোনো অংশে কম হচ্ছে না।

অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফেসবুকে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন হিরো আলম নামে। এক সময় সিডি বিক্রি করতেন এই হিরো আলম ওরফে আশরাফুল আলম। তারপর শুরু করেন ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা নিজ গ্রাম বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়ায়। অভাবের তাড়নায় ছোটবেলায় আলম আপন পরিবারের স্নেহ হারিয়ে আশ্রয় পান একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাসায়। আব্দুর রাজ্জাক তাকে ছেলের মতো করেই বড় করে তোলেন। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে আলমকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার তাগিদে। শেষ পর্যন্ত ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন এবং তার মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন আলম।

ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে স্বপ্ন মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের সাথে মডেলিং। আলম দুইবার নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। হেরে গেছেন। তবে এলাকার মানুষজন তাকে পছন্দ করে। তাই নির্বাচনে এবার তিনি মাত্র ৭০ ভোটে হেরে দ্বিতীয় হয়েছেন। একজন মানুষ জন্মে হারিয়েছেন পিতৃমাতৃ স্নেহ, অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন, পেয়েছেন সামান্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসা দিয়ে শুরু করে আজ তিনি স্ত্রীসন্তান নিয়ে সচ্ছল শান্তির জীবন যাপন করছেন। স্বপ্ন দেখেছেন মডেল হবার, স্বপ্ন দেখেছেন নির্বাচিত প্রতিনিধি হবার। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছেন। সফলও হয়েছেন।

হিরো আলমের কথায় তার প্রমান পাওয়া গিয়েছে। তিনি সচেতনভাবেই বলেন, তার চেহারা তথাকথিত নায়কদের মতো নয়। নাচ, গান, অভিনয় কোনোটাতেই তিনি পারদর্শী নন। তারপরও তিনি ৫০৩টি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন দুটি নাটকে এমনকি একটি সিনেমাতেও। সিনেমাটির নাম ‘হাবা আব্দুল্লাহ’। পাঠক, লক্ষ করুন, আপনি হিরো আলমকে মনে মনে যা ভাবছেন সিনেমাটির নামের সঙ্গে তা মিলে যাচ্ছে কি না? এখানেই হিরো আলমের জিত। কারণ আপনি যা ভাবছেন তিনি তা জানেন, কিন্তু তার ভাবনা আপনি জানেন না।

এই নগরে মিডিয়ায় মুখ দেখানোর স্বপ্ন নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী সকাল-দুপুর-রাত কাটিয়ে দেন। তারা চেষ্টা করেন। কিন্তু সব চেষ্টা গন্তব্য খুঁজে পায় না। হিরো আলমও চেষ্টা করছেন ২০০৮ সাল থেকে। তিনি এ জন্য কারো দ্বারস্থ হননি। তার যতটুকু সামর্থ্য ঠিক ততটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন একেবারে নিজের মতো করে। এমনকি যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আপনি তাকে জানেন, হিরো আলম সেখানেও অচল। তার সহকর্মী জামান রায়হান যেদিন তাকে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রস্তাব দেন, সেদিন হিরো আলম বলেছিলেন, ‘হামাগোরে অইগল্যা দিয়া কী হবি?’

জামান রায়হান এরপর ইউটিউবে হিরো আলমের নামে একটি চ্যানেল খোলেন। গত রোজার সময় আপনি হয়তো তাকে সেখানেই প্রথম দেখে থাকবেন, কিন্তু তার এলাকার মানুষ তাকে চেনে গত এক দশক থেকে। প্রান্তিক সেই মানুষগুলো তাকে ভালোবেসে উৎসাহ দিয়েছেন। মুখ টিপে হাসার মানুষও কম ছিল না। তাচ্ছিল্যের সেই হাসি হিরো আলমের গলায় ফাঁস হয়ে আটকে যায়নি। কারণ ‘করিতে পারি না কোনাে কাজ সদা ভয়, সদা লাজ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে’ কামিনী রায়ের এই কবিতা হিরো আলম পড়েছেন কিনা জানি না, তবে এখানে তার চরিত্র উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। নইলে তিনি বলবেন কেন- ‘হামি ভাই পজিটিভ লেই। নেগেটিভ হ’লে হামাক কন। আপনেরা ডাকছেন বইল্যা আচ্চি।’

এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হিরো আলম সত্যিই জনপ্রিয় তারকা হয়ে উঠছেন। সব মিলিয়ে সত্যিই সত্যিই তারকা হয়ে যাচ্ছেন হিরো আলম। যেমন করে নায়লা নাঈম, জ্যাকুলিন মিথিলা, অনন্ত জলিল এই দেশে তারকা হয়েছেন তেমন করে হিরো আলমও এই দেশে তারকা হয়ে যাচ্ছেন। আগামী কোরবানীর ঈদে টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর চাহিদাসম্পন্ন তারকাদের অন্যতম হতে পারেন হিরো আলমও। কারণ মিডিয়ার কাছে টিআরপি, র‌্যাঙ্কিংটাই শেষ কথা। হিরো আলম যখন দেশের অনেক তারকার ফেসবুক ওয়ালে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। আগামীতে টিভি পর্দায়ও জায়গা করে নেবেন। আর আমার মতো বিনোদন সাংবাদিককে বাধ্য হয়ে হয়তো একদিন লিখতে হবে হিরো আলমের উপর বিশেষ ফিচার ‘যেভাবে হিরো আলম তারকা হলেন’।

প্রিয় গুণীজনেরা, আমরা যখন হিরো আলম নিয়ে মাতামাতি করি। তখন হিরো আলমেরই উপকার হয়। তার ভিডিওগুলোর ভিজিটর গত দিনে কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে। কারণ আমাদের মতো অনেকেই মজা করার ছলে হিরো আলমের প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছি। যেমন করে একদিন অনন্ত জলিলের প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমরা ভালো কিছু ফেসবুকে শেয়ার করি না। হিরো আলম, নায়লা নাঈম, জ্যাকুলিন মিথিলা নিয়ে মজা করতে গিয়ে তাদেরকে তারকা বানিয়ে দেই। আমাদের পাঠের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে অনলাইন নিউজপোর্টাল। তখন নায়লা নাঈম, হিরো আলমেরা হয়ে উঠেন তারকা। সবার চাহিদাকে তখন বাণিজ্যে রূপ দেয় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা।

হিরো আলমের মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেন মো. মশিকুল ইসলাম। তিনি ভাঙলেন এ কথার রহস্য। তিনি জানালেন, পরিচিতি পাওয়ার পর ঢাকা থেকে অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা এসেছেন হিরো আলম। এখন কোরবানি ঈদে প্রচারের জন্য নাটক তৈরির কাজ চলছে। অনেকেই সেখানে ছোটখাটো চরিত্রে হিরো আলমকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। কেউ আবার সুযোগ পেয়ে তাকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়েও নিয়েছেন। এদের অনেকেই হিরো আলমকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেননি। তার সরলতার সুযোগ নিয়েছেন তারা। আর এতেই হিরো আলমের যৌক্তিক আপত্তি।

বগুড়ার এরুলিয়া গ্রামের সহজ প্রকৃতিতে আশরাফুল আলমের বেড়ে ওঠা। সরলতা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সেই সারল্যের অর্থ দুর্বলতা ভাবা অন্যায়। সুতরাং মিডিয়ায় যারা তাকে কাজের সুযোগ দেবেন ভাবছেন, তাদের তাকে প্রাপ্য সম্মানী দিতে হবে। আর আমাদের দিতে হবে সম্মান- এটাও কিন্তু হিরো আলমের প্রাপ্য।
৩০ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে