জাবেদ রহিম বিজন : নিজের ছেলেদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পঁচাশি বছর বয়স্ক হাজী মো. শামসু মিয়া। যেকোনো সময় ছেলেরা খুন করতে পারে তাকে। ইতিমধ্যে বৃদ্ধ বাবাকে মাদকসেবী বলে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়েছে ছেলেরা। বিনা কারণে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় সেখানে । চালানো হচ্ছে আরো অত্যাচার।
অসহায় এই বৃদ্ধ ছেলেদের হাত থেকে বাঁচার আকুতিতে বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে রাতেই তিনি তার এক মেয়ের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি চলে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার হড়িয়াবহ গ্রামে বাড়ি শামসু মিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তার মেয়ে লাভলী ইসলাম জলি অভিযোগ করেন এর আগে ছেলেরা মারধোর করে তাদের মাকে মেরে ফেলেছেন। শামসু মিয়ার ৮ ছেলে ও ৫ মেয়ে। তার সকল সম্পত্তি ছেলেরা ছলছাতুরি করে নিজেদের নামে লিখিয়ে নেয়। শামসু মিয়ার স্ত্রী ছেলেদেরকে এই অন্যায়ের বিষয়টি বললে তারা তাকে (মা) মারধোর করে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় মাকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে তাদের মা বাবা শামসু মিয়াকে ওয়াদা করান তিনি যেন সম্পদে মেয়েদের ন্যায্য পাওনার ব্যবস্থা করেন। মা মারা গেলে চেহলামের অনুষ্ঠান শেষে আব্বা ছেলেদের কাছে মায়ের ওসিহতের কথা বলেন।
মেয়েদের সম্পদ দেয়ার কথা শুনে ছেলে আলমগীর, হারুন, জাহাঙ্গীর, আলমগীরের বউ আয়েশা খাতুন, জাহাঙ্গীরের বউ বাবলী খাতুন ও কাউছার আব্বার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে মারধোর করে। এ ঘটনা ঘটে গত ২৭ শে মে। এর পরদিন ২৮শে মে দিবাগত রাত ১১টার দিকে ছেলে হারুন ও জাহাঙ্গীর ৭/৮ জন লোকের একটি দল আমাদের বাড়িতে পাঠায়। তারা মাইক্রো করে আসে এবং ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আব্বাকে তুলে নিয়ে যায়। লাভলী বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমরা জানতে পারি আব্বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে অশ্রু নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন।
মাদকসেবী বলে তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়। আমরা ঐ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গেলে তারা জানায় আব্বাকে ছাড়িয়ে নিতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হবে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশের সহায়তায় ৪ মাস পর আব্বাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর ১৫ই অক্টোবর পূর্বের কায়দায় ছেলেরা আব্বাকে আবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
৭/৮ জন মাইক্রোতে করে বাড়িতে এসে জোরপূর্বক আব্বার হাত, মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রত্যাশা নামের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তার সন্ধান পাই আমরা। বৃহস্পতিবার (২৭শে অক্টোবর) শামসু মিয়াকে সেখান থেকে বের করে আনা হয়। এরপরই ছেলেরা তার প্রাণনাশ করাসহ নানা হুমকি দিতে শুরু করে। লাভলী বলেন আমাদের আব্বা জীবনে একটি সিগারেটেও টান দেননি। তাকেই মাদকসেবী সাজিয়ে তারা বন্দি করে রাখার ব্যবস্থা করে। প্রথম দফায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর শামসু মিয়া কসবা থানায় ৮ ছেলের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ১২ই অক্টোবর এই ডায়েরিটি করা হয়।
এতে তিনি বলেন, তার ছেলে হুমায়ুন মিয়া, কবির আহম্মেদ, হারুনুর রশিদ, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আবু কাউসার, মনির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম বাবু তার নামে থাকা স্থাবর-আস্থাবর সম্পত্তি গোপনে যোগসাজশে ভুলবুঝিয়ে তাদের নামে লিখিয়ে নেয়। তার স্ত্রী মেয়েদের সম্পত্তি দেয়ার কথা বললে ছেলেরা তাকে (মাকে) মারধোর করে। এতে আমার স্ত্রী ষ্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে ওয়াদা করান আমি যেন মেয়েদের সম্পদে ন্যায্য হক দেই।
তার মৃত্যুর ৪০ দিন পর মিলাদ মাহফিল শেষে আমি ছেলেদেরকে একথা বললে তারা আমার ওপর অত্যাচার শুরু করে। মেয়েদেরকে বাড়িতে আসতে বাধা দেয়। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শামসু মিয়ার ৫ মেয়ে হেলেনা খাতুন, সুমি আক্তার, লাভলী ইসলাম জলি, লুৎফা আক্তার ও পারভীন আক্তার উপস্থিত ছিলেন। মেয়েরা পিতাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করার সময় ছেলে কবির আহম্মেদ সেখানে অবস্থান নেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কবির বলেন তার অন্য ভাইয়েরা পিতাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো ও অত্যাচার করেছে এই অভিযোগ ঠিক। এমজমিন
২৯ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি