সিধু বসু : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার পর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় অর্ধশতাধিক হিন্দু নারী-পুরুষকে পিটিয়ে আহত করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ, ফেইসবুকে ধর্মীয় উস্কানীমূলক পোস্ট করে নাসিরনগরে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণ বেড় গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবক। পরে সেই যুবককে স্থানীয় লোকজন শুক্রবার তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। তবে অভিযুক্তের দাবি, কেউ তার ফেসবুক হ্যাক করে এই উসকানি মূলক পোস্ট শেয়ার করেছে৷ পরে সেই পোস্ট মুছে দেন রসরাজ৷
এঘটনার জের ধরে অন্তত পাঁচটি মন্দির ভাঙা হয়েছে; ভাংচুর-লুটপাট হয়েছে হিন্দুদের শতাধিক ঘর। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় এক কর্মসূচি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানায় যায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে রোববার সকালে ‘খাঁটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের’ নেতারা ‘নাসিরনগর আপামর তৌহিদি জনতার’ নাসিরনগর ডিগ্রি কলেজ মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দেন। আর ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের’ নেতারা নাসিরনগর খেলার মাঠে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন। পৃথক এই সমাবেশ চলার সময় হিন্দুপাড়াগুলোতে হামলা চালানো হয়। তবে দুই সংগঠনের নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিজিবির উত্তর-পূর্ব রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মাশরুর উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ও ইউএনও চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ।
এদিকে, নাসিরনগরে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের নীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এই ঘটনা। তিনি সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
নাসিরনগরের ঘটে যাওয়া এই সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে বেদান্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ বাংলাদেশ, সনাতন বিদ্যার্থী পরিষদ ও জাগো হিন্দু বাংলাদেশ।
৩০ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি