ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : নাসিরনগরে হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওদিকে ঘটনার তদন্তে পুলিশের বিশেষ দলও কাজ করছে নাসিরনগরে।
গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
সভায় জেলা প্রশাসক রেজুওয়ানুর রহমান জানান- নাসিরনগরের পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট শান্ত রয়েছে। এ সময় তিনি আরো জানান, নাসিরনগরের হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। ইতিমধ্যে মন্দিরে থাকা প্রতিমা বিসর্জনও দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন সারাক্ষণ নাসিরনগরে কাজ করছেন।
ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সামছুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশিরুল হক ভূঞা প্রমুখ।
সভায় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, নাসিরনগরের পরিস্থিতি তদারকি করতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি সাখাওয়াত হোসেন গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন। তাছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং কারিগরি সহায়তা দেয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দু’জন জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপারসহ দশ সদস্যের একটি দল নাসিরনগরে কাজ করছে।
এসপি আরো বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে মোট ৪ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন তিনি। গ্রেপ্তার আতঙ্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। মুসলমানরা আতঙ্কিত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরপরাধ কাউকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না বলেও জানান তিনি।
ঘুরে দাঁড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা: সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৩০শে অক্টোবর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নাসিরনগরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের ভাঙাচোরা ঘরদোয়ারে এখন নতুন টিনের ঝলকানি। মন্দিরের ভাঙাচোরা মূর্তিও বিসর্জন দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও মন্দির মেরামতে বিতরণ করা হয়েছে নগদ ৮ লক্ষাধিক টাকা ও ১১৪ বান্ডেল ঢেউটিন।
এছাড়াও দেয়া হয়েছে শাড়ি-লুঙ্গি। সহায়তা অব্যাহত আছে বিভিন্ন সংগঠনের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থীদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে এক লাখ টাকা। এছাড়া রাউজানের একটি সংগঠন দিয়েছে ৭ লাখ টাকা।
ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট দেয়ার জেরে নাসিরনগর সদর ও হরিপুর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা হয়। সরকারি হিসাবে এ তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫১টি পরিবার ও ১৩টি মন্দির। ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেয় সরকার।
পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তি তাদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সহায়তায় মেরামত হয়েছে তাদের ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি। মন্দির মেরামতেও দেয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এসব সহায়তা প্রাপ্তিতে ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। এমজমিন
২০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি