ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পর দুই মাস পার হয়ে গেছে। প্রশাসনের তৎপরতায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কাটলেও ঘটনার মূল হোতারা রয়েছে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও পুলিশ আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করে এক পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সমাবেশ থেকে লাঠিসোটাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে বেশ কয়েকটি হিন্দু পাড়ায় একযোগে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০টি মন্দিরসহ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় অন্তত ১০ জনকে। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তারা প্রায় সবাই ঘটনার নিন্দা জানান এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন বা দাবি জানান।
ঘটনার দুই মাস পার এখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিরনগরের ঘোষপাড়া ও দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন লাল দাস, মন্টু দাস ও নকুল আনন্দ দাস অধিকারী জানান, ঘটনার দুই মাস পর এলাকার পরিবেশ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এখনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছেন। তবে আতঙ্ক কাটতে শুরু করলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় তাদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর জানান, নাসিরনগরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট দুই থেকে আড়াই হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিসহ মোট ১০৫ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই মাস পার হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল অপরাধীদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের অনেকেই গা ঢাকা দেওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
উল্লেখ্য গত ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামের রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনার পরের দিন ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা সদরে আহলে সুন্নাতুল জামাত এবং খাঁটি আহলে সুন্নাতুল জামাতের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি সমাবেশ আহ্বান করা হয়। এই সমাবেশ থেকে সকাল ১০টার দিকে একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পাড়া মহল্লায় হামলা চালায়।পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে কাজল দত্ত এবং নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় অজ্ঞাত ১২শ’ জনকে আসামি করা হয়।
তবে গত ৩০ অক্টোবর হামলা, ভাঙচুরের পর আরও চার দফায় সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
তবে যে সাইবার ক্যাফে থেকে বিতর্কিত ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করা হয় তার মালিককে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। -বাংলা ট্রিবিউন।
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম