ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : এবার মুখ খুললেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের কোণঠাসা নেতারা। দলের নেতাদের সমালোচনা করলেন কঠোরভাবে। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিকে পকেট কমিটি, পদলেহনকারীদের কমিটি বলেও উল্লেখ করেন। বললেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ব্যাংকের চাকুরে, ঢাকা আর বিদেশে বসবাসকারীরা পদ পেয়েছেন। তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা জেলা আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে রক্ষার আহ্বান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি’র জেলা পরিষদে শুভাগমন উপলক্ষে পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গতকাল মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরিষদের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমানুল হক সেন্টু, সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন ও সহসভাপতি তাজ মো. ইয়াছিন।
দলে নানাভাবে কোণঠাসা এই নেতাদের বক্তৃতা ঝড় তুলেছে শহরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বক্তৃতার অডিও-ভিডিও রেকর্ড ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সহসভাপতি তাজ মো. ইয়াছিন তার বক্তৃতায় বলেন, শফিকুল আলম এমএসসি’র বিজয়ের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নমরুদের শাসনের অবসান ঘটলো। সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আজকে মুখ বন্ধ রাখার সময় নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ চাচ্ছে আমরা যেন মুখ খুলি।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো বাইন্ডিংস ছিল না। তারপরও আমরা দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন করেছি। শফিকুল আলম আওয়ামী লীগে ছিলেন, আওয়ামী লীগেই আছেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি একটি পকেট কমিটি। এই কমিটিতে এক নেতার পদলেহনকারী যারা, তারাই জায়গা পেয়েছে। এই নেতাদের কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকে না। তারা ঢাকা ও বিদেশে থাকে। কেউ ঢাকায় ব্যাংকে চাকরি করেও জেলা আওয়ামী লীগে পদ পেয়েছে। এই পকেট কমিটি যখন হয় তখন আমি মুখ খুলতে পারিনি। কারণ, আমার সামনে ছিল পৌরসভা নির্বাচন। আজকে জেলা আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমানুল হক সেন্টু বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অশুরের নেতৃত্ব বিরাজমান। আজকে দুঃখ লাগে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা যখন বলেন, শফিকুল আলম দলের কেউ না। তিনি ওই নেতাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আওয়ামী লীগ আপনার পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সংগঠন। জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগঠন।
সেন্টু বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ সবই জানে। এত দিন কথা বলতে পারেনি জেলে যাওয়ার ভয়ে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে সেন্টু বলেন, ইউপি নির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে আপনারা লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। এর জবাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের কাছে দিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে কলুষমুক্ত করার কথাও বলেন সেন্টু তার বক্তৃতায়। এই তিন নেতার বক্তৃতার সময় করতালি দিয়ে সাদুবাদ জানান মিলনায়তনে উপস্থিত শ’ শ’ লোক। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়্যারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি ও জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী মো. আবদুল আলিম বক্তৃতা করেন। শফিকুল আলম তার বক্তৃতায় জেলাবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। এমজমিন
১৬ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি