ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের ২২শে ডিসেম্বরে। ওইদিন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৫টি পদ ঘোষণা করা হয়। এ পাঁচজনের জেলা বিএনপি-ই পার করেছে ২ বছর। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদকালও ২ বছরই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি এখনো। জেলা নেতারা এমাস-ওমাসে, এসপ্তাহ-ওসপ্তাহে কমিটি হচ্ছে বলে পার করে দিচ্ছেন সময়। দেড়-দু’মাস আগে জেলা কমিটি গঠনে ঢাকায় নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি চূড়ান্ত করা হয় বলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান। কিন্তু সেই কমিটি এখনো কেন্দ্রে জমা পড়েনি।
জেলা বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রে এই কমিটি জমা দেয়া হবে। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে- কমিটি হচ্ছে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। পদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সহ-সভাপতির পদ হচ্ছে ১৫টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বেড়েছে ৩ টি এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বেড়েছে দু’টি। জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন- দলের নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জেলে ছিলো। আন্দোলন কর্মসূচি ছিলো। এসব কারণে আমরা কমিটি নিয়ে বসতে পারিনি।
সম্মেলনের দিন সভাপতি (হাফিজুর রহমান মোল্লা), সিনিয়র সহ-সভাপতি (ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল), সাধারণ সম্পাদক (জহিরুল হক খোকন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এডভোকেট আনিসুর রহমান মঞ্জু) ও সাংগঠনিক সম্পাদকের (সিরাজুল ইসলাম) পদ ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে জেলা বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। পাশাপাশি মামলা-মোকদ্দমার কারনেও দল নির্জীব হয়ে পড়ে। জেলা বিএনপি’র অর্ধশত নেতা কারান্তরীণ হন ২০১৫ সালে। ওই বছর একের পর এক মামলায় কারা ফটক পেরুতে পারছিলেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি’র নেতারা।
উচ্চ আদালত থেকে জামিন এনে নিম্ন আদালতে বেইলবন্ড জমা দেয়ার পরই নতুন মামলায় তাদের গ্রেপ্তারের আবেদন করে পুলিশ। কয়েক দফা নতুন মামলায় তাদের মুক্তি আটকে যায়। ধংসাত্মক ও নাশকতার ১২ মামলায় জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অর্ধশত নেতাকর্মী জেলে যান। প্রায় আড়াই মাস জেলে কাটাতে হয় তাদের। বলতে গেলে পুরো জেলা বিএনপিই করাগারে ছিল তখন। দলীয় সূত্র জানায়- জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে মোট ১২ টি মামলা হয়। জেলা বিএনপি’র বর্তমান কমিটি, যুবদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের সবাইকে এসব মামলার আসামি করা হয়।
তাদের মধ্যে জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. শামীম মোল্লা, যুবদল সভাপতি মো. মনির হোসেন,ছাত্রদল সেক্রেটারি মো. ইয়াছিনসহ ৪৬ জন নেতাকর্মী ২০১৫ সালের ২৬শে অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এরমধ্যে ৪ জনের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। বাকি ৪২ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয় । প্রায় আড়াইমাস কারাভোগের পর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ৩০ নেতাকর্মী ২০১৬ সালের ১১ই জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। ওইদিন রাতে শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় দফায় দফায় মাদ্রাসা ছাত্র এবং ব্যবসায়ী-ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হলে পরদিন শহরে তাণ্ডব চালানো হয়।
এ ঘটনায় বিএনপি’র সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে ১১ই জানুয়ারি রাতেই সদর থানার এসআই আলী আক্কাস বাদী হয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৪৪ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২৫০ জনের নামে মামলা দেন। জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন- পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে আমরা সেটি কেন্দ্রে জমা দেবো। জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন- এ মাসেই কমিটি হয়ে যাবে। এটি শতভাগ নিশ্চিত। এমজমিন
১৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি