ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: ছোট বোন মীম কারো সঙ্গে যাচ্ছে—দেখে জানতে চায় রেশমা। মীমের সঙ্গে কথা বলে রেশমা বুঝতে পারে তার বোনের সঙ্গে থাকা লোকটি তাকে নিয়ে যাচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে রেশমা বিষয়টি উপস্থিত এক দোকানিকে অবহিত করে। ওই দোকানি লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মীমকে উদ্ধার ও তাকে নিয়ে যেতে থাকা এক ব্যক্তিকে আটক করে।
ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার। গতকাল রবিবার দুপুরে পৌর এলাকার রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আটক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে বিকেল নাগাদ এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর ১২টায় রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়। ছুটি শেষে স্কুল থেকে বেরোনোর পর শিক্ষকদের আম দেওয়ার কথা বলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মহিমা আক্তার মীমকে সঙ্গে নিয়ে যেতে থাকে এক ব্যক্তি।
বিষয়টি নজরে এলে মীমের চাচাতো বোন ও ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রেশমা আক্তার এগিয়ে যায়। তখন মীম জানায়, শিক্ষকরদের আম দেবে বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মীমকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রেশমা প্রতিবাদ করলে তখন তাকে মারার ভয় দেখায় ওই ব্যক্তি।
রেশমা বিষয়টি বিদ্যালয়ের সামনের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাবুকে জানায়। আকরাম লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মীমকে নিয়ে যেতে থাকা ব্যক্তিকে আটক করে। আটক যুবক জানায়, তার নাম এনামুল হক। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
ঘটনা জেনে জড়ো হওয়া লোকজন এ সময় এনামুলকে মারধর করে। এলাকাবাসী ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনামুল অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। পুলিশের কাছেও সে বিভিন্ন রকম কথা বলে।
আখাউড়ার শান্তিনগর এলাকার শিশু মীম কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ম্যাডামরারে আম দিব কইয়া এই বেডা (যুবক) আমারে লইয়া যাইত তাহে। ’ রেশমা বলে, ‘মীমরে লইয়া যাইতাছে দেইক্কা আমি কাছে যাই। তহন ওই বেডা আমারে থাপ্পড় দিব কয়।
আমি দোকনদারের কাছে গিয়া কতাডা কই। ’ আকরাম হোসেন বাবু বলেন, ‘রেশমা নামের মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জানায় যে তার বোনকে কে যেন নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি এগিয়ে গিয়ে লোকজনকে নিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করি। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। ’
শিশু মীমের বাবা মো. মুসা মিয়া জানান, তাঁর এক ভাতিজির কাছ থেকে জেনে তিনি বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। শিক্ষকদের আম দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি মীমকে নিয়ে যাচ্ছিল বলে তিনি মেয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। তবে থানায় মামলা দেওয়ার বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রেশমা নামের মেয়েটিসহ স্থানীয় লোকজনের কারণে মীম রক্ষা পেয়েছে। এভাবেই বুদ্ধিমতী রেশমার বুদ্ধিতে বেঁচে গেলো মীম।
খবর দিলে পুলিশ এসে আটক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যায়। ’ আটক যুবককে থানায় নিয়ে যাওয়া আখাউড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল নাগাদ এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে