নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারের নির্ধারিত ক্যাম্প এলাকা থেকে অন্য জেলায় পালানোর সময় ১ মাসে অন্তত ২৫,০০০ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া অন্তত ৬৯০ জনকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আটক করে ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের(রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে অবস্থানজনিত সমস্যা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে বুধবার ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
টিআইবি জানিয়েছে, ‘৮ অক্টোবর, ২০১৭ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬৯০ জন রোহিঙ্গাকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং ক্যাম্প এলাকা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার সময় দেশের পায় ২৫,০০০ জনকে আটক করা হয়েছে(বিভিন্ন জেলা থেকে)। সারাদেশে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয় সমীক্ষায়।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ থেকে শুরু করে অস্থায়ী শিবিরে পৌছানোরর পদ্ধতি, মৌলিক চাহিদাসহ অন্যান্য সহায়তায় গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগ, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, ত্রান ব্যবস্থাপণা, পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দায়িত্ব ও সমন্বয়, নানাবিধ অপরাধ ও দুর্নীতির ঝুঁকির বিষয়সমুহ পর্যালোচনা করে গুনগত এ সমীক্ষায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
চ্যালেজ্ঞগুলো হচ্ছে, সীমানা অতিক্রম, মুদ্রা বিনিময়, অবস্থান ও আশ্রয় নির্মাণ,ত্রান ব্যবস্থাপণা ও জীবন ধারণে সহায়তা (খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাষন), নিরাপত্তা নিবন্ধন ও অভিযোগ নিরসন এবং পরিবেশগত প্রভাব ও বিপর্যয়।
রোহিঙ্গা ইস্যূতে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার, দেশের সাধারণ মানুষ জাতিসংঘ এবং মানবিক সংগঠনগুলোর নেয়া তড়িৎ ও সমন্বিত উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করে মোট ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি।
সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, উদ্ভুত রোহিঙ্গা সমস্যাটি যাতে একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ না হয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া দ্রূত সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু, প্রতিবেশি ভারত ও চীনসহ মিয়ানমারের সঙ্গে বিশেষ কুটনৈতিক, ব্যবসা, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে এমন সকল দেশ ও জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে মিয়ানমারের ওপর সমন্বিত কূটনৈতিক প্রভাব,
বিশেষ করে অবরোধ আরোপসহ সুনির্দিষ্ট চাপ প্রয়োগ, পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করে যতদ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্নকরণ এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ত্রাণপ্রাপ্তির সঙ্গে এই নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন, রাশিয়া এবং জাতিসংঘের সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন: যেসব দেশ রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার কথা বলছে তারাই আবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবারহ করছে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে তাদের এমন দ্বিচার বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন এটি বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি মিয়ানমার সৃষ্ট একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশ কেবল মানবিক কারণে এ সমস্যায় জড়িয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বিশ্বেরে উচিৎ এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করা।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস