ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বাইশমৌজা বাজারে মাত্র পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক ঝুড়ি পাঁকা টমেটো। এর প্রতিটি ঝুড়িতে ৩০/৪০ কেজি টমেটো রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে জমি থেকে উঠিয়ে বাজারে নিয়ে আসার ভাড়া ও শ্রমের দামও পাচ্ছেন না কৃষকরা। এসব টমেটো সংরক্ষণের জন্য আশপাশে কোনো কোল্ড স্টোরেজ ব্যাবস্থা না থাকায় পাইকারদের কাছে তেমন চাহিদা নেই। তাই বাধ্য হয়েই পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকের ঘাম জড়ানো এই কষ্টের ফসল।
উল্লেখ্য প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দু'দিন নবীনগর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী বাইশমৌজা বাজারে হাট বসে। জেলার সর্ববৃহৎ গরুর হাটও এটি। হাটটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলার মিলনস্থল মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত হওয়ায় তিনটি জেলা থেকেই কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন এখানে। পাইকার ও ক্রেতারাও আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমিতে প্রতি বছরের মতো এবারও চাষ করা হয়েছে উন্নত জাতের টমেটো। এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদিত টমেটো বেশি হওয়ায় সামান্য শ্রমের মূল্যও পাচ্ছেন না কৃষকরা। বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে।
মঙ্গলবার নৌকা বোঝাই করে হাটে টমেটো নিয়ে এসে বিপাকে পরতে হয়েছে কৃষকদের। ভালো পরিবহন পরিবহন সুবিধাও কাছাকাছি সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থা না থাকায় পাইকাররা কিনছে না টমেটো। নরসিংদী জেলার রায়পুরার চাঁনপুরেরটমেটো চাষী ইসমাইল জানান, দুই কানী (স্থানীয় ভাষায় জমির একক) জমিতে টমেটো চাষ করতে তার প্রায় সত্তর হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর এই জমির টমোটো বিক্রি হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর সর্ব সাকুল্যে ত্রিশ হাজার টাকাও বিক্রি আসবে না। প্রথম দিকে ২০/৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বর্তমানে এক কেজির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে এক মণ। একই উপজেলার মাঝের চরের চাষী রাহু মিয়া, চাঁনপুরের আক্তার মেম্বার ও আউয়াল মিয়াও জানান একই অবস্থার কথা।
নবীনগর উপজেলার গাছতলার মদন মিয়া, চরের হাটির হুরুন আলী ও অলি মিয়া বলেন, অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তারা ৪০/৫০ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে ওজন করে বিক্রির বাস্তবতা নেই। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ঝুড়ি চুক্তি। অনুমান ২৫/৩০ কেজির এক ঝুড়ি টমেটো বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এমনিতেই টমেটো কম সময় পর্যন্ত সতেজ থাকে। তাই যথাসময়ে বিক্রি না হওয়ায় অনেক টমেটা নষ্ট হচ্ছে।
হাসন আলী ব্যাপারী এই হাট থেকে পাইকারি সবজি কিনে সাপ্লাই করেন বিভিন্ন বাজারে। তিনি জানান, কিছু দিন আগেও ৩০/৩৫ টাকা পাইকারি ধরে টমেটো কিনেছেন। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় টমেটো কিনে ভাড়া দিয়ে আর পরতা হচ্ছে না তাদের। তিনি বলেন, বাজারের আশপাশে একটি কোল্ড স্টোর থাকলে এসব টমেটো সংরক্ষণ করে গড় সিজনে চাহিদা পূরণ করা যেত। তাহলে কৃষকেরাও ন্যায্য মূল্য পেত।
জানা যায়, বাইশমৌজা বাজরের পাশেই কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী জে কে ইন্টারন্যাশনাল টেডিং কোং-এর সত্তাধিকারী এস এম আলমগীল হোসেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে তার পরিকল্পনা থাকলেও নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় শুরু করার সাহস করতে পারছেন না।
স্থানীয়রা জানান, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এমন অনেক উদ্যোগক্তাই এগিয়ে আসবেন। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতি থেকে বাঁচবেন তেমনি বছরের অন্য সময়েও সবজি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস