প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ষাটোর্ধ্ব এক বাবা মফিজুল হক। হাতে প্রয়াত মেয়ের ছবিসংবলিত একটি ফেস্টুন। তাতে লেখা, ‘আমার একমাত্র সন্তান কামরুন নাহার তুর্ণা হত্যার বিচার চাই এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।’ একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে একাই এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
মফিজুল হকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামে। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল চরচারতলায় শ্বশুরবাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংক থেকে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা কামরুন নাহারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মফিজুল হক বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল আশুগঞ্জ থানায় কামরুন নাহারের স্বামী আরিফুল হক ওরফে রনিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শফিউল আজমের আদালতে বিচারাধীন আছে।
মফিজুলের অভিযোগ, এই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখন তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আপস না করলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন আসামিপক্ষের লোকজন।
মফিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামরুন নাহারকে ২০১২ সালে পারিবারিকভাবে আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে আরিফুল হকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাদের একটি কন্যাসন্তান হয়। বিয়ের পর থেকে ২০১৬ সালে আরিফুলের মুঠোফোনে একটি আপত্তিকর ছবি নিয়ে কামরুন নাহারের ঝগড়া হয়। পরে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানও করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে ঝগড়া চলতে থাকে। সেই ঝগড়ার জের ধরেই ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে শ্বাসরোধে কামরুন নাহারকে হত্যা করে লাশ বাড়ির পরিত্যক্ত ট্যাংকে রেখে দেয় আরিফুল।’ সম্পত্তির লোভে আরিফুল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে কামরুন নাহারের পরিবারের অভিযোগ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন আশুগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় সন্তান রাখা–না রাখা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে খুন হন কামরুন নাহার। স্ত্রীকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর নিজেই লাশ বাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকে ফেলে দেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার আরিফুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে আরিফুলের বাবা আমিরুল হক বলেন, ‘কামরুন নাহারের বাবা আমার ভাই। তাঁকে কোনো ধরনের হুমকি বা ভয় দেখানো হয়নি। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকির ঘটনায় মফিজুল হক থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি করেছেন কি না আমার জানা নেই। যদি তিনি অভিযোগ দায়ের করে থাকেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হবে।’
সূত্র: প্রথম আলো