ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : আখাউড়ায় ভাবনা (৩০) নামে এক হিজড়ার বুকে ঠাঁই পেলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর (পাগলি) দেড় বছরের কন্যা। সে এখন পৌরশহরের রাধানগর হিজড়া আবাসস্থলে আদর, সোহাগ আর পরম মমতায় খেলাধুলায় দিনাতিপাত করছে।
জানা গেছে, আখাউড়া পৌরশহরের খরমপুর কেল্লা বাবার মাজারে বুধবার রাতে এক ছোট্ট শিশুর চিৎকার ভেসে আসছিল। চিৎকার শুনে মাজারে থাকা ছিন্নমূল দুই কিশোরী ছুটে যান সেখানে।
গিয়ে দেখেন, মানসিক ভারসাম্যহীন এক পাগলি তার সন্তানকে সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দিচ্ছেন। আবার কখনও কখনও গলাটিপে ধরছেন। ওই কিশোরীরা পাগলির কাছ থেকে তার দেড় বছর বয়সের শিশু সন্তানকে নির্যাতনের কবল থেকে উদ্ধার করে।
পরে ওই ছিন্নমূল কিশোরীরা পাগলির সন্তানকে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে চলে যায়। এ সময় তারা মেয়েটিকে গোসল করিয়ে নতুন জামাকাপড় কিনে কিছু খেতে দেয়।
বিষয়টি নজরে আসে স্টেশনে থাকা ভাবনা নামক এক হিজড়ার। ওই কিশোরীদের সঙ্গে ভাবনা হিজড়ার পরিচয়ের সুবাধে পাগলির সন্তানকে সে লালন-পালন করার জন্য কিশোরীদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। পাগলির সন্তানও তাদের আদর আর মমতা পেয়ে বেশ খুশিতে সময় পার করছে।
ভাবনা হিজড়া বলেন, ‘কখনও বাবা কিংবা মা হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু আমারও স্বাদ বা ইচ্ছা জাগে মা কিংবা বাবা ডাক শুনতে। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই পাগলি তার সন্তানকে সিগারেটের আগুনে ছ্যাকা দিচ্ছেন, গলাটিপে ধরছেন। আবার কখনও ব্লেড দিয়ে ছোঁয়া দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, শিশুটি এখন অসহায়। আমি একজন অসহায় শিশুর পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এখন সে আমার আদর পেয়ে অনেক খুশি। আমারও বুকটা ভরে গেছে। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো আদর-সোহাগ দিয়ে লালন-পালন করতে চাই। যদি আইনগতভাবে নিতে হয় তাতেও আমি রাজি’।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি শ্যামল কান্তি দাস। তিনি বলেন, শিশুটির মা যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন। তার শিশুসন্তানকে নির্যাতন করে যে কোনোমুহূর্তে সে হত্যা করতে পারে। তাই আপাতত ওই ভাবনা নামক হিজড়ার হেফাজতে আছে।