নিউজ ডেস্ক : মঙ্গলবার সকালে সাড়ে তিন বছরের মেয়ে মাহিমাকে যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল তখন তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জানা যায়. শিশুটির বাড়ি শরীয়তপুর। তার সাথে ছিলে মা আর দাদি। কিন্তু দুজনের কারোই খোঁজ নেই। বিকেলে জানা গেলো, দাদি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আর মা চলে গেছেন চিরদিনের জন্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সোমবার দিবাগত রাতের ট্রেন দুর্ঘটনায় এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে । মঙ্গলবাল বিকেলে মাহিমার বাবা মাইনুদ্দিন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কসবায় যান। স্ত্রী কাকলি আক্তারকে (২৮) খুঁজে পান কসবার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা অস্থায়ী তথ্যকেন্দ্রের লা'শের সারিতে। আর সাড়ে তিন বছরের মেয়ে মাহিমাকে পান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে।
সোমবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে কসবার মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মাঝামাঝি বগিতে ঢুকে পড়ে তূর্ণা নিশীথা। ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহ'ত হন। আহ'ত হন শতাধিক। আহ'তদের উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। মাহিমাকে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে।
মাইনুদ্দিন বলেন, পরশু দিন সিলেটের হজরত শাহজালাল (রা.) ও হজরত শাহপরানের (রা.) মাজার জিয়ারত করতে যান তার স্ত্রী কাকলি আক্তার, মেয়ে মাহিমা আক্তার, মামা জাহাঙ্গীর মাল, মামি আমাতন বেগম ও মামাতো বোন মরিয়ম। সোমবার দিবাগত রাত সিলেট থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হন তারা। চাঁদপুর থেকে ট্রলারে করে তাদের শরীয়তপুরের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী, মামি ও মামাতো বোন মারা যান।
মাইনুদ্দিন বলেন, তার মামা জাহাঙ্গীর এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কাকলির বড় ভাই ফরিদ মুন্সী ও তিনি লাশ শনাক্ত করেন।
এদিকে সকালে যখন মাহিমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন তার সাথে কেউ ছিল না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন তখন বলেন, সকালে আহত রাহিমা আক্তার নামের এক বৃদ্ধা ওই শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। রাহিমা চাঁদপুরের সাতিরাশির বাসিন্দা। তখন তিনি এই শিশুর নাম মাহিমা বলে জানান। রেজিস্টার্ড বইয়ে সেটিই উল্লেখ করা হয়। শিশুটির কপালের বাম পাশ থেকে মাথার পেছন অংশ পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। কপালে সেলাই দেওয়া হয়েছে। শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে আছে।
বর্তমানে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছে মাহিমা। সার্জারি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স সেলিনা আক্তার ও শিক্ষানবিশ নার্স তাহরিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে নার্সদের কক্ষে রাখা হয়েছে। কারণ, মানুষ ভিড় করছে। শিশুটি একটু পর পর শুধু বাইরে যাবে বলছিল।