ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের জের ধরে হোসেন মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে নামাজ পড়া অবস্থায় ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হোসেন মিয়া তাতুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
বুধবার দুপুরে আহতের ছেলে বাদল মিয়া বাদী হয়ে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়া (৫০) ও মেহেদী হাসানকে (২২) রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
আহতের পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে গত ২৮ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হয়। উপজেলার ছলিমাবাদ ইউপিতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হয়।
নির্বাচনের আগে ইউপি সদস্যদের জয়-পরাজয় নিয়ে বৃদ্ধ হোসেন মিয়া ও গ্রামের লোকজন বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। ওই ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামে হাবিবুর রহমান ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে ৪৪৮ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।
মঙ্গলবার বিকালে বাড়িতে আসরের নামাজ পড়ছিলেন হোসেন মিয়া। ওই সময় হাবিবুর রহমানের লোকজন হোসেন মিয়ার বাড়িতে যায়। তাকে ঘর থেকে বাইরে আসতে বলে তারা। হোসেন মিয়া নামাজ শেষ করে আসবে বলে তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। পরে ঘরে নামাজ পড়া শুরু করেন।
একপর্যায়ে হাবিবুর রহমানের লোকজন নামাজ পড়ার সময় পেছন দিক থেকে হোসেনকে মারধর শুরু করেন। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেন।
এদিকে ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই আহতের ছেলে বাদল মিয়া সদ্যজয়ী ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, মিস্টার মিয়া ও মেহেদী হাসানসহ ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত হোসেন মিয়া বলেন, হাবিব মেম্বার ও তার ভাই প্রথমে মারধর শুরু করে, পরে অন্যরাও মারধর করে। তিনি বলেন, মেম্বার পাশ করা হাবিবুর রহমান আমার ভাতিজা হয়। নির্বাচনের আগে গ্রামের আরেক ইউপি সদস্য প্রার্থী ওলী মিয়ার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হয়। তখন সুষ্ঠু ভোট হইলে ভাতিজা হাবিব জিতব বলে মন্তব্য করছিলাম। আর কাইট্টা (জোর করে ভোট নিলে) অন্য কেউ জিতব। তবে ভোট কাইট্টা নেওনের কথা আমি ভাতিজারে কইতাম পারতাম না।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু কথাটা অন্য কেউ গিয়া এমনভাবে লাগাইছে যে, আমি নাকি কইছি- ভাতিজার পায়ের রগ কাইট্টালামু। এইডা নিয়াই হাবিবের লোকজন আমারে নামাজের মধ্যেই মারধর করছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, কি যেন একটি ছবি নিয়ে ছোট-ছোট ছেলেরা গিয়ে কাকাকে মারধর করছে। পরে আমি গিয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আসলে কি নিয়ে মূল ঘটনা আমি জানি না।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি রাজু আহমেদ বলেন, ওই বৃদ্ধকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের এ মামলায় গ্রেফতার করে চালান করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।