ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার মাসুদুর রহমান সংঘর্ষে নিহত হয়। এ জন্য দায়ি করা হয় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে। তবে নিহত মাদ্রাসাছাত্র মাসুদুরের বড় ভাই মাওলানা মো. মামুনুর রশীদ দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের পিটুনিতে তার ছোট ভাই মারা গেছে। পুলিশ চারতলা থেকে তার ভাইকে নিচে ফেলে দিয়েছিল। আহত হওয়ার পরও অনেকক্ষণ সে জীবিত ছিল। কিন্তু পুলিশি ব্যারিকেড থাকায় তাকে হাসপাতালে নিতে পারেনি। এসব তথ্য তাকে মাদ্রাসাছাত্ররা জানিয়েছে।’
নিহতের ভাই মামুনুর রশীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তথ্যে দেখা যায়, ১১ জানুয়ারি রোগী ভর্তির ডায়েরিতে নিহত মাসুদুর রহমানের নামের পাশে ভর্তির সময়সূচিতে লেখা রয়েছে রাত ২টা ৪৫ মিনিট। আরও বলা হয়েছে, ‘ব্রট ডেথ’। অর্থাৎ হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। একই তথ্য দিলেন পোস্টমর্টেম প্রস্তুতকারী চার সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্য সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রানা নুরুস শামস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার রাতে তিনি বলেন, মাসুদুর রহমানের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চূড়ান্ত করার আগে চার সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়। জখমজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে তার। তবে কি কারণে জখম হয়েছে এটা তদন্তকারী সংস্থা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘তার বুকের বাম দিকে কালো দাগ ছিল। বুকের একটি হাড় ভাঙাসহ বামপাশের লাঙস ফেটে গিয়েছিল। মূলত লাঙস ফেটে যাওয়ার কারণেই সে মারা যায়। এছাড়া পায়ের গোড়ালির আঘাতে বোঝা যায়, সে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যায়।’ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রস্তুতকালে মাদ্রাসার দু’জন প্রতিনিধি ছিলেন বলেও জানান ডা. রানা।’
এদিকে মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মুফতি শামসুল হক এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি রাত আড়াইটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসামিরা সবাই অজ্ঞাত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোবারক উল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, ‘পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ করলে ঝামেলা আরও বাড়বে। কারণ প্রতিপক্ষের মামলায় আপনাদেরও আসামি করা হবে। এ অবস্থায় হয়রানি থেকে বাঁচতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসায় ঢুকে নিরীহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম এজাহারে পুলিশের এএসপি তাপস রঞ্জন ঘোষ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ বিশ্বাস, বিজয় টেলিকমের মালিক রনি ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক ভুঁইয়াসহ ১৪ জনের নাম দিয়েছিলাম। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে এদের নাম তদন্তের আওতাভুক্ত করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়।’
প্রসঙ্গত, পুলিশের যে দু’জন কর্মকর্তাকে প্রথম এজাহারে অভিযুক্ত করা হয় ১২ জানুয়ারি রাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
অন্যদিকে নিহত মাসুদুর রহমানের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় পুলিশ প্রশাসন। এ বিষয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মুফতি মোবারক উল্লাহ বলেন, স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ও আইজিপির পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়। এর আগে সোমবার রাতে মামলার বাদী মুফতি শামসুল হক বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। দেশে যেন আর ফেতনা না বাড়ে সেজন্য হরতালসহ অন্যান্য কর্মসূচি প্রত্যাহার করি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয় তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। আমরা চাই না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরেকটা ৬ ফেব্রুয়ারি সৃষ্টি হোক। কেননা ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে ৬ মাদ্রাসা ছাত্র মারা যায়।’
২০ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ