ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তোমার ফাঁসি হবে, হবে, হবেই।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক এই মন্তব্য করেন। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আখাউড়া উপজেলা কমান্ড এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২৯ জুলাই একটা রায় হয়েছে। ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার চূড়ান্ত রায়। এই রায়ে তার ফাঁসি হয়েছে। আমি একটা টেলিভিশন ক্লিপিং দেখলাম; সে (সাকা চৌধুরী) বলছেন যে, “আমার বাবা বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না, না, না”। চিন্তা করেন, বাংলাদেশে বসে ওই কথা বলেন। তার বাবা যে রাজাকার, তাতো আমরা জানিই। একবার বললেই তো হয়। এখন আমি বলছি, “বিচারে তোমার (সাকা) ফাঁসি হবে, হবে, হবেই”।’
কসবা-আখাউড়া এলাকার সাংসদ আনিসুল হক বলেন, ‘আমার বাবা, মা ও ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা। আজকে আপনাদের কাছে আহ্বান, সন্তান হিসেবে দাবি, ‘এই রকম যারা রাজাকার তাদের প্রতিহত করুন। তবে আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না। সামাজিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আইনের আশ্রয় নেন। আমি কথা দিচ্ছি আওয়ামী লীগ সরকার এদের বিচার করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে, জাতিকে কলঙ্কমুক্ত এবং দেশকে সোনার বাংলা করবেই।’
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমার পিতৃতুল্য, আমি আপনাদের সন্তান। কসবা-আখাউড়া কেন বাংলাদেশের কোনো মুক্তিযোদ্ধার অসম্মান সহ্য করা হবে না। আপনাদের চুল পরিমাণ অশ্রদ্ধা, বিন্দু পরিমাণ অপমান আমি সহ্য করব না।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আপনারা জানেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করার প্রথম ষড়যন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ। সেই ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার অন্ততপক্ষে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাহিত করা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। আর ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর আমলে মুক্তিযোদ্ধারা নিজের পরিচয় দিতেও সাহস পাননি। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তারা। এরশাদ ও খালেদা জিয়া দুজনই রাজাকারদের সরকারে রেখেছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি আপনাদেরকে (মুক্তিযোদ্ধাদের) শ্রদ্ধা করতে না শিখি তাহলে আমরা বাংলাদেশকে শ্রদ্ধা করতে শিখব না। আমরা যদি আপনাদেরকে ভালোবাসতে না শিখি, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে পারব না। কারণ আপনারাই বাংলাদেশের জন্মদাতা। আপনাদের কারণেই আজকে বাংলাদেশ। আমি মন্ত্রী।’
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আখাউড়ায় কমপ্লেক্সের জায়গার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়ে আইনমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, অনেক দাবির পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঢাকায় একটি কবরস্থান হয়েছে। আখাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি কবরস্থান বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আখাউড়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আনিছুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ এ কে এম এমদাদুল বারী, যুদ্ধকালীন কমান্ডার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, আখাউড়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার হারুন উর রশিদ, আখাউড়া উপজেলা কমান্ডার আবু সাইয়িদ মিয়া প্রমুখ।
এর আগে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক উপজেলা পরিষদের শহীদ স্মৃতি সৌধ চত্বরে তিন দিন ব্যাপী ফলজ বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন।
১ আগস্ট ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি