জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান রতনের স্ত্রী ফারজানা হোসেন সোনিয়া ঘর ছেড়েছেন ২৯শে মার্চ সকালে। এরপরই কথা উঠে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ঢাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সৈয়দ তৌফিক আহমেদের হাত ধরে উধাও হয়েছেন সোনিয়া। অবশ্য ঐদিনের পর তারা দুজনই আড়াল হয়ে যান।
রতন তার স্ত্রীকে খুঁজে হয়রান। পুলিশ নিয়ে ছুটে চলেন তৌফিকের বাসায়, তার বন্ধু-আত্মীয়স্বজনের বাসায়। স্ত্রীকে ভাগিয়ে নেয়ার বিচার পেতে ছুটে যান প্রভাবশালীদের দুয়ারে। এ ব্যাপারে তিনি গুলশান থানায় একটি মামলাও করেন। এতে তার স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগ আনা হয় তৌফিকের বিরুদ্ধে। রতন আর সোনিয়ার দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ ১৮ বছরের। তাদের রয়েছে ৩ সন্তান। ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে ১৯৯৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর বিয়ে হয় এ দুজনের। রাজনৈতিক সহকর্মী হওয়ায় রতনের বাসায় যাওয়া-আসা ছিল তৌফিকের। অভিযোগ এরমধ্যেই নেতার সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে তার।
এ ব্যাপারে আবদুল হান্নান রতন বলেন- আমি ডকুমেন্ট ছাড়া কোনো কথা বলছি না। শুধু শুধু একজনকে দায়ী করছি না। মার্চের ২০ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত ফোনে তারা দুজন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই কথা বলেছে। আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও তার সঙ্গে কথা বলেছে। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সে তার সঙ্গেই ছিলো। আমার গাড়ি-বাড়ি আছে। আমি ২/৩টি গাড়ি মেইনটেইন করি। আমার গাড়ি রেখে সে তৌফিকের গাড়ি কেন ব্যবহার করবে। তার গাড়ি কেন চেয়ে নেবে। আমি বিষয়টি এমপি সাহেবকে জানানোর পর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন। সে স্বীকার করেছে গাড়ি দিয়েছে, ফোনে কথা বলেছে। তখন এমপি সাহেব বলেছেন তার ওয়াইফ তো রাজনীতি করে না। তার সঙ্গে তোমার ফোনে কথা হবে কেন। তার বউকে গাড়ি দিয়েছো সেটা কি তুমি রতনকে জানিয়েছো। এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি সে। তখন এমপি সাহেব তাকে বলেছেন ইউ আর এ কালপ্রিট।
রতন জানান, তার স্ত্রী ২৯শে মার্চ সকাল ১১টায় ঘর থেকে বের হয়ে যান। সন্ধ্যায় তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর তিনি থানা-পুলিশের সহায়তা নেন। তিনি বলেন- ঐদিন দিবাগত রাত আড়াইটায় অর্থাৎ ৩০ তারিখে পুলিশ নিশ্চিত হয় সে তৌফিকের সঙ্গেই গেছে। আরও একটি ব্যাপার হচ্ছে ২৯ তারিখ থেকে তৌফিক অফিসে যাচ্ছে না। ৩০শে মার্চ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত সে অফিসে গেলো না কেন? তিনি বলেন- আমি যদি মাইরধরই করতাম তাহলে সে থানা পুলিশের আশ্রয় নিতো। ডাক্তারের চিকিৎসা করাতো। মারধরের মধ্যে ১৮ বছর সে পার করলো কিভাবে।
তিনি বলেন- এরা একটা সিন্ডিকেট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুবলীগের এক নেতা আরেকজনের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে। একটা ফ্যামিলি ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা একটা ধারা হয়ে গেছে। আসলে তারা মনে করেছিলো আমার ওয়াইফের নামে কোটি কোটি টাকা রয়েছে ব্যাংকে। কিন্তু আমার স্ত্রীর নামে কোনো একাউন্টই নেই। সে ভদ্রমহিলার লাইফটা ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন- বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একজন চাকরিজীবী আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকে কী করে? তবে ফারজানা হোসেন সোনিয়া বলেছেন- তিনি কারো হাত ধরে ঘর ছাড়েননি। স্বামীর দীর্ঘ নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েই ঘর ছেড়েছেন। তৌফিকের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন সেটা ছিলো অন্য পারপাসে। সোনিয়া নিজেই গত ২রা এপ্রিল এ প্রতিবেদকের মোবাইলে ফোন করে বলেন তৌফিক কে? তাকে ধরে আমার ঘর থেকে বের হতে হবে কেন? সেখানে তো অন্য আরেকজনের নামও হতে পারে।
তিনি জানান- ২৯শে মার্চ তিনি রতনকে ডিভোর্স দিয়েছেন। ১৮ বছর একদিন-দুদিন নয়। একমাস-দু’মাস নয়। দীর্ঘ সময়। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার, তিন সন্তানকে ফেলে আমি ডিভোর্স দেয়ার পদক্ষেপ কেন নিলাম? তা ছোটখাটো কোনো কারণে নয়। আপনার যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে তখন আপনি পাল্টা আক্রমণ করবেন। আমি তার মতো নই বলেই সসম্মানে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছি। আমার গায়ে হাত তুলতে তুলতে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়েছে। ২৩শে মার্চ সে আমার গায়ে হাত তুলে। গলাটিপে ধরে মারার জন্য। বলে আমি নাকি ১০/১২ জনের সঙ্গে প্রেম করেছি। তাহলে সে কেন আমার সঙ্গে সংসার করলো। এখন ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তার কাণ্ডকীর্তি কারো অজানা নয়।
তিনি আরও বলেন- আমি ঢাকাতেই আছি। বাবার বাড়িতেও যাইনি। তার টাকা আছে, ক্ষমতা আছে। তার হয়রানির ভয়ে আমার বাবা-মাও বাসায় থাকছে না। এক প্রভাবশালীর পরিচয় দিয়ে বলেন আমি তার বাসাতেই আছি। তাহলে আমি তৌফিকের সঙ্গে গেলাম কোথায়? তৌফিক কোথায় আর আমি কোথায়। তবে এটা সত্যি তৌফিকের সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। রতন আমার নামে অনেক ঋণ উঠিয়েছে। তৌফিক যেহেতু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ঋণের বিষয়ে তার সঙ্গে ডিসকাস করেছি। আমি তাকে ডিভোর্স দিলে এই ঋণগুলো কি হবে তা নিয়ে কথা বলেছি। এখন সে মানুষগুলোকে হয়রানি করছে। ডিভোর্স দেয়ার পরও ভয়ে আমাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।
তাকে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগে তিনি রতনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করছেন বলেও জানান। এফিডেভিটের মাধ্যমে রতনকে ডিভোর্স দেয়ার একটি কপিও এ প্রতিবেদকের মেইলে পাঠিয়েছেন সোনিয়া। যাতে দেখা যায় মহানগর হাকিমের আদালতে গত ২৮শে মার্চ এই এফিডেভিটটি করা হয়। যাতে বিয়ের পর থেকে মনের মিল হচ্ছে না বলে তালক দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
অভিযুক্ত সৈয়দ তৌফিক আহমেদ বলেন- সোনিয়ার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে শুধু ব্যাংকিং ব্যাপারে। আর একজনের সঙ্গে ফোনে কথা হতেই পারে। কিন্তু যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আমি সেধরনের চরিত্রের লোক নই। সে যখন আমাকে বলেছে তার স্ত্রী আমার সঙ্গে রয়েছে তখন আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আমি তার বাসায় দু-একবার গিয়েছি এটা সত্যি। সেই পরিচয়ের সূত্রে তিনি আমার কাছে গাড়ি চেয়েছেন। তিনি হেল্প চেয়েছেন বলে আমি করেছি। তিনি জানান, তিনি ৪ঠা এপ্রিল জামিন নিয়েছেন। ঐদিন রাতেই পুলিশ তার বাসায় গেছে। তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সূত্র : মানবজমিন
৭ এপ্রিল, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস