চাঁদপুর: উঁকি দিয়ে খুঁ'জছে মাকে শিশু সন্তান, সাড়া দিচ্ছেন না মা। ছোট্ট কোমলমতি পা দুটি উঁচু করে, নরম তুলতুলে হাত দিয়ে শ'ক্ত করে জানালার গ্রিল ধ'রে উঁকি-ঝুঁ'কি’ মে'রে মাকে দেখার চেষ্টা করছে। ডাকছে মা মা বলে এই বছর তিনেকের শিশু ছেলে। তবু সাড়া মিলছে না। মায়ের সাড়া না পেয়ে, চিৎ'কার, চেঁ'চামে'চি তারপর কাঁদতে শুরু করা। এমনই এক চিত্র ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়ার ঘরে। করোনায় আক্রা'ন্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় নিজের সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না তিনি।
সারাদিন বাচ্চাটি কেবল মাকে ডাকছে। মায়ের কাছে যেতে চাওয়া ছাড়া আর একটি কথাও বলে না। অথচ মা পাশের কক্ষে থেকেও একবার কোলে তু'লে নিতে পাড়ছেন না অবুঝ শিশুটিকে। ছেলের কান্নাকে উপেক্ষা করে ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকার য'ন্ত্র'না কেবল সেই মা বলতে পারেন!
হঠাৎ করে কেউ দেখলে বলবেন, এ কেমন মা! ঘরে থেকেও সন্তানের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। তিনি কি অভিমান করে বসে আছেন? নাকি লু'কোচু'রি খেলছেন?
না তিনি (মা) অভিমানও করেননি, আর লু'কোচু'রি খেলছেন না। তবে ভবনের একটি কক্ষে বসে নীরবে কাঁদছেন। কারণ তিনি করোনা পজিটিভ। তাই শিশু সন্তান দ্বিজরাজসহ পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা রয়েছেন। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়ার দৈনিক জীবনযাপনের গল্প এখন এটি।
তিনি করোনা ঠে'কাতে, প্রান্তিক মানুষের সেবা নিশ্চিতকরণে ত্রাণ বিতরণ, কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সম্মুখভাগের যো'দ্ধা হয়ে মাঠ প্রশাসনে প্রজাত'ন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সত'র্ক থাকলেও সং'ক্র'মণ এ'ড়ানো সম্ভব হয়নি তার। গত ২৯ এপ্রিল ইউএনও’র করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সা'র্জন। এরপর থেকেই তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এর আগে ২৭ এপ্রিল ন'মুনা পরীক্ষা করান তিনি। তবে কোনো উপসর্গ না থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, সেই কৌতু'হলবশত নমুনা পরীক্ষা করান।
এদিকে সরকারি বাসভবনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় পরিবারের সবার কাছ থেকে আলাদা থাকতে হয় ইউএনওকে। কিন্তু তার একমাত্র শিশু সন্তান কি বোঝে হোম কোয়ারেন্টাইন কি? সারাক্ষণ মা মা বলে চিৎকার-চেঁ'চামে'চি, তারপর কাঁদতে থাকা। তাকে কে বোঝাবে, কতটা ভালোবাসা নিয়ে তার মা দরজা বন্ধ করে বসে আছেন।