ঢাকা : মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিল আট বছরের শিশু মাহিন। দুপুরে সেখানে খেয়েদেয়ে ফেরার কথা নিজেদের বাসায়। কিন্তু কোথাও আর যাওয়া হয়নি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মাহিনের। গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে না-ফেরার দেশে। মায়ের ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় দুরন্ত গতির প্রাইভেট কারের নিচে চাপা পড়ে মাহিন।
মায়ের চোখের সামনেই থেঁতলে যায় তার ছোট্ট শরীর। শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মারাত্মক আহত মাহিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ছেলে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় মা নাজমা বেগমের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। তিনি বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন।
জ্ঞান ফিরে এলেই আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘হায়, আমি ছেলেকে রক্ষা করতে পারলাম না। চোখের সামনেই বুকের ধনকে মরতে দেখলাম। আমি কত হতভাগী। মা হয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।’
পুলিশ জানায়, নাজমা বেগমের বাসা রাজধানীর ডেমরা থানাধীন আমুলিয়া এলাকায়। তার স্বামী অলিউল্লাহ কাঁচামাল ব্যবসায়ী। তাদের দুই সন্তান। মাহিন বড় আর ফাহিম ছোট। ফাহিমের বয়স পাঁচ বছর। মাহিন আমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। শনিবার সকালে দুই ছেলে মাহিন ও ফাহিমকে নিয়ে তাদের মা মাতুয়াইলে তার বাবার বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
সেখানে যাওয়ার আগে রায়েরবাগে ফরিদা বেগম নামে আরেক আত্মীয়র বাসায় যান তারা। সেখান থেকে বের হয়ে দুই সন্তান নিয়ে বেলা ১১টার দিকে রায়েরবাগ বাস স্টপেজ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন নাজমা। দুই ছেলে দুই হাত ধরেছিল। হঠাৎ মাহিন মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় একটি প্রাইভেট কার তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। মাহিনের রক্তে লাল হয়ে যায় পিচঢালা পথ। কয়েকজন পথচারীর সহযোগিতায় মাহিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান নাজমা বেগম। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১টায় সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মাহিনের মা জানান, নানাবাড়ি যাবে বলে সকাল থেকেই খুব আনন্দে ছিল দুই ভাই (মাহিন ও ফাহিম)। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বিকালে তাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা। নিমিষে অন্ধকার হয়ে যায় নাজমা বেগমের পৃথিবী।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাহিনের পরিবার এ দুর্ঘটনায় থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। লাশের ময়নাতদন্তও করতে চায়নি তারা। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তারা শিশুটির লাশ নিয়ে গেছে। - যুগান্তর
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি