বুধবার, ০১ মার্চ, ২০১৭, ০৫:৩২:৫১

যে ঘটনায় ট্রাকচালকের ফাঁসি আর পরিবহন ধর্মঘট

যে ঘটনায় ট্রাকচালকের ফাঁসি আর পরিবহন ধর্মঘট

নিউজ ডেস্ক: ট্রাকচালক মির হোসেন মিরুর রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে এখন পরিবহন ধর্মঘট চলছে। সাভারের ঝাউচরে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

খোদেজা বেগমকে হত্যার দায়ে চালক মির হোসেন মিরুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার পাঁচ নম্বর জজ কোর্ট থেকে ওই রায় দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের ২০ জুন ঘটে যাওয়া ওই ঘটনাটিকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে মঙ্গলবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

তবে ঘটনাস্থল সাভারের ঝাউচর গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো, এটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড।

সেদিন কি হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রত্যক্ষদর্শী নাসিমা বেগম, সলিম মিয়া ও জুলেখা বেগম বলেন, সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর এলাকার একটি গ্রাম ঝাউচর। ২০০৩ সালের ২০ জুন ওই গ্রামের নুরু গাজী স্ত্রী খোদেজা বেগমকে তাদের পারিবারিক রাস্তায় ট্রাকচাপা দেওয়া হয়।

তারা বলেন, ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে ট্রাকযোগে খোদেজা বেগমের বাড়ির পাশের একটি জমি ভরাটের কাজ করছিল ট্রাকচালক মির হোসেন মিরু। পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম থেকে মাটি এনে খোদেজা বেগমের পারিবারিক একটি রাস্তা দিয়ে মাটি আনার কাজ করা হচ্ছিল।

অনুমতি না নিয়ে ও বাতাসের সঙ্গে ধুলো ময়লা ছড়িয়ে পড়ার কারণ দেখিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে মাটি আনার প্রতিবাদ জানান খোদেজা বেগম ও তার স্বামী। তারা ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। এ নিয়ে ট্রাকচালক মিরু এবং তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়।

২০০৩ সালের ২০ জুন খোদেজা বেগমের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই রাস্তা দিয়ে আবারও মাটির ট্রাক নিয়ে আসে ট্রাকচালক মিরু। এ সময় ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেন খোদেজা বেগম, তার স্বামী এবং প্রতিবেশীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রাকচালক মিরু সবাইকে রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। অন্যথায় সবার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

এরপরেও তারা রাস্তা থেকে না সরলে ট্রাকচালক মিরু গাড়িতে উঠে প্রথমে একটু পিছনে নিয়ে আসেন ট্রাক। পরে দ্রুত বেগে এসে রাস্তায় অবস্থানকারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়। এ সময় অন্যরা রাস্তা থেকে সরে যেতে পারলেও খোদেজা ট্রাকের সামনের চাকা এবং পেছনের চাকায় পিস্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।

খোদেজা বেগমের ছেলে বিল্লাল হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই দুই দফা তদন্ত করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। ঘটনাটি যে একটি হত্যাকাণ্ড সেটি পুলিশের তদন্ত এবং আদালতের সাক্ষ্য প্রমাণেও প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছরের বিচারাধীন এই মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।

খোজেদার স্বামী নুরু গাজী বলেন, এটি অন্য সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা নয়। ঘটনাটি সড়ক কিংবা কোন মহাসড়কে ঘটেনি। শুধু ট্রাকের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেই একে সড়ক দুর্ঘটনা ধরা যায় না। এটি একটি ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। নিজের পেশীশক্তির জোরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ট্রাকচালক মিরু। আদালতের রায়ে আমরা সন্তষ্ট। আমার স্ত্রী হত্যার এমন বিচারে অন্য কোনো ট্রাকচালক ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস পাবে না।

ঝাউচর গ্রামের বাসিন্দারাও একই কথা বলেছেন। এটি অন্য সড়ক দুর্ঘটনার মতো নয় দাবি করে তারা চালক মিরুর দণ্ডকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন। এদিকে এই রায়কে কন্দ্রে করে চলমান পরবিহন র্ধমঘট প্রত্যাহারের জন্য পরবিহন শ্রমিক ফেডোরশেনরে প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম দস্তগীর বলেন, ঠাণ্ডা মাথায় ট্রাকচাপা দিয়ে খোদেজা বেগমকে নিজ পারিবারিক রাস্তায় হত্যার ঘটনায় ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি মিরু হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো সড়ক দুর্ঘটনা নয়, এটি ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড।

আদালতের রায়ে বলা হয়, ঘটনার দিন পারিবারিক রাস্তা দিয়ে ট্রাক নিতে বাধা দেন খোদেজা বেগম ও তার পরিবারের লোকজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিরু ট্রাকচাপা দিয়ে খোদেজা বেগমকে হত্যা করেন।

উল্লেখ্য, ট্রাকচালক মিরুর বাড়িও হেমায়েতপুর এলাকার ঝাউচর গ্রামে।
০১ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে