নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত বৈশাখী পরিবহনের চালক শাহিনুর প্রধান ওরফে শাহ আলমের (৩৬) বাড়িতে চলছে মাতম। তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুর্শিদা শোকে স্তব্ধ।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহ আলম।
এর আগে সকালে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর গাবতলীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ওই চালক আহত হন।
শাহ আলমের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর অসুস্থ বাবা খায়ের উদ্দিন শোকে কোনো কথা বলতে পারেননি। আর তার মা পাগলিনীর মতো কাঁদছিলেন।
মুর্শিদার কাছে স্বামীর কথা জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। পরে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, 'সকাল ৮টার দিকে বড় ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়েছে।'
'মোর বাবা হারাই গেছে, এখনো মুই (আমি) দেখোনি। বাবাজি কখন বাড়িত আসবে- কবা (বলা) পারোচো না'- বলে বিলাপ করছিলেন নিহত শাহ আলমের বৃদ্ধা মা।
পাশাপাশি স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়েছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম বালিঘাটা গ্রাম।
নিহত শাহ আলম ওই গ্রামের ছায়ের উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তার বড় ছেলে আবু মুসা (১৩) ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে মেজবাহ হোসেন (৫) ব্রাক স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। তার স্ত্রী মুর্শিদা বেগম এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এদিকে শাহ আলমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়ে তার বড়ভাই আবদুল খালেক লাশ নিতে ঢাকার পথে রয়েছেন।
এছাড়া পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব এবং জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক ইতিমধ্যে তার লাশ গ্রহণের জন্য ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের মামলায় বাসের চালক জামির হোসেনকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা, পরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা।
এরই মধ্যে সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারী নিহতের দায়ে চালকের বিরুদ্ধে সোমবার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।
০১ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস