ঢাকা: বখাটেদের হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে শাহআলীর বিসিআইসি কলেজের দুই শিক্ষার্থী যমজ বোন ফারিহা হাবীব মীম ও আসওয়াদ হাবীব জীমকে কলেজে ও কোচিংয়ে যেতে হচ্ছে মা-বাবার পাহারায়। ওই ঘটনার ৯ মাস পরও তাদের পুরো পরিবারের দিন কাটছে আতঙ্কে।
বর্তমানে দুই মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘ওরা আগে নিজেরাই কলেজে যেত। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে মীম ও জীম কলেজে এবং কোচিংয়ে যাওয়ার সময় আমি আর আমার স্ত্রী সঙ্গে যাই। আমরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছি। প্রথমে সবাই সহযোগিতা করার কথা বললেও পরে কারও কাছ থেকে তেমন কিছু পাইনি। আমার মেয়েরা সেদিন প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু তাতে লাভ হয়েছে কী? নির্যাতন থেমে নেই। আমরাও মানসিকভাবে নিরাপদে নেই।’
গত বছরের ১৯ অক্টোবর শাহআলীর বিসিআইসি কলেজের দুই শিক্ষার্থী যমজ বোন মীম ও জীম ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় স্থানীয় বখাটে জীবন করিম বাবু কলেজের সামনের রাস্তায় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। মীম ও জীমের উদ্দেশেও আপত্তিকর মন্তব্য করে সে। সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন মীম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে ওই বখাটে। এরপর তারা কলেজের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে বাঁশ দিয়ে তাদের আবার মারধর করে বাবু। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুই বখাটে ছিল। তাদের আঘাতে জীমের বাঁ-পা ভেঙে যায়।
এ ঘটনায় মীম ও জীমের বাবা আহসান হাবীব শাহআলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জীবন করিম বাবু এবং আরও তিনজনকে অজ্ঞাত তরুণকে আসামি করা হয়। তবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে শুধু জীবন করিম বাবুর বিরুদ্ধে। এ কারণে চার্জশিট দুর্বল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে যমজ বোনের পরিবারের পক্ষ থেকে।
মীম ও জীমের বাবা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) একজন প্রশিক্ষক। মেয়েদের কোথাও নিরপত্তা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। অভিযোগপত্রের বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘মামলায় দুর্বল চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আসামিরা খালাস পেয়ে যাবে। বাবু গ্রেফতার হওয়ার দুই-তিন মাস পরই জামিন নিয়েছে। এখন সে বাইরেই আছে। বখাটেরা দিনশেষে ছাড়া পেয়ে যায়।’
মামলাটি তদন্ত করেছেন শাহআলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনোজ কুমার সরকার। দুর্বল চার্জশিটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। তার ভাষ্য, “মামলাটি তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারা, পেনাল কোডের ৩২৩, ৩২৫ ও ৫০৬ ধারায় একজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছি। শুধু বাবুর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। বাদীকে কয়েকবার মেয়েদের চিকিৎসার মেডিক্যাল সনদ দিতে বলেছি, তিনি দেননি। এমনকি দু’বার নোটিশ করে তার সহযোগিতা চেয়েও পাইনি।”
এসআই মনোজ আরও বলেন, ‘আমি যথেষ্ট শক্তিশালী চার্জশিট দিয়েছি। মেডিক্যাল সনদ ছাড়া ৩২৫ দেওয়া যায় না, সেটাও আমি দিয়েছি। বাদী তার পরিবারকে নিয়ে আদালতে সাক্ষী দিয়েছে, সেটিও আমাকে জানায় না। আদালতে যদি তারা কাগজপত্রগুলো দেয় তাহলেও এই ধারাটি টেকানো যাবে, তা না হলে ৩২৫ ধারা টিকবে না। তবে এই মামলায় আসামির সাজা হবেই।’
এদিকে মা-বাবার সঙ্গে মিরপুরের পূর্ব মণিপুরের আগের বাসাতেই এখনও আছেন মীম ও জীম। তবে মেয়েরা যতক্ষণ বাসায় থাকেন ততক্ষণ তাদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় উল্লেখ করে হাবীব বলেন, ‘আমরা মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ওদের নিরাপদে লেখাপড়া করাতে চাই। বর্তমানে তারা বিসিআইসি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওরা মাধ্যমিকে এ-প্লাস পেয়েছিল। কিন্তু আতঙ্কে থেকে কিভাবে এখন ভালো রেজাল্ট করবে আমার মেয়েরা?’
ওই ঘটনার পর কলেজ এলাকায় আর বখাটেদের দেখেনি মীম ও জীম। বাবুর পরিবার কয়েকবার আপস করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করেছেন তাদের বাবা। তিনি বলেন, ‘বাবুর উকিল আমাকে ফোন দিয়েছিল, তারা মিটমাট করতে চায়।
এছাড়া বাবুর মা আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু আমি বলেছি, যা হওয়ার আদালতে হবে। আমরা দুই মেয়ে, আমি, তাদের বন্ধুরা এবং আমার স্ত্রী সাক্ষী দিয়েছি। আমি এর বিচার ও আমার মেয়েদের নিরাপত্তা চাই।’
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস