নিউজ ডেস্ক : বাবা অসুস্থ। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পিতা-মাতার সম্বল বলতে লিখনই ভরসা। এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে সেই ভরসার মূল্য দিতে চেয়ে রাজধানীতে এসে প্রাণঘাতী মশার কামড়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন তিনি। পড়তেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে।
বগুড়ার ছেলে লিখন ঢাকায় এসে বিবিএতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মোহাম্মদপুরে হওয়ায় তাজমহল রোডে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।
বেশ কয়েকদিন আগে থেকে জ্বর-জ্বর অনুভব করতে থাকেন। শুরুতে পাত্তা দেননি।
‘জ্বর হওয়ার পর শুরুতে ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েছিল। এরপর ডাক্তার দেখালেও কিছু বুঝে ওঠা যায়নি। আমরাও ভেবেছি সাধারণ জ্বর। মাঝে মাঝে আসত, আবার চলে যেত। সোমবার ওকে সঙ্গে করেই নিয়ে গেল!’ বলছিলেন লিখনের বন্ধু রাজু।
লিখনের অবস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যেতে থাকলে বন্ধুরা মিলে ধানমন্ডির সিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন অচেতন। নেয়া হয় আইসিইউতে। ডাক্তাররা চেষ্টা করেও আর জ্ঞান ফেরাতে পারেননি।
মশার কামড়েই লিখনের জ্বর এসেছিল, তা তিনি জেনে যেতে পারেননি। তার বন্ধুরাও জানেন না। এই প্রতিবেদককে বিষয়টি জানিয়েছেন সিটি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. জাফর ইকবাল জামালি, ‘আমরা যখন ছেলেটিকে হাতেই পাই অবস্থা খুব খারাপ ছিল। জ্বরের সঙ্গে, খিচুনি। এক পর্যায়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। আর তাতেই অজ্ঞান হয়ে যায়। ওকে মূলত viral encephalitis ভাইরাস আক্রমণ করেছিল। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মশার কামড়েই হয়ে থাকে।’
‘এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হলে রাতে মশারি ব্যবহারের বিকল্প নেই। বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। মোট কথা মশার হাত থেকে সাবধান থাকতে হবে।’ পরামর্শ জাফর ইকবাল জামালির।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দুই দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জ্বর আসে। জ্বর কখনো লম্বা সময় ধরে থাকে। অনেক সময় শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে গেলে জ্বর আসে। সেই সঙ্গে বমি, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, অল্প কিংবা দীর্ঘ সময়ের জন্য জ্ঞান হারানো, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া এবং চোখ-কানে সমস্যা দেখা দেয়। সর্বশেষ অবস্থা কোমায় চলে যাওয়া।
জাফর ইকবাল জামালি জানান, এই সমস্যার পাশাপাশি লিখনের শরীরে ডেঙ্গুর উপস্থিতিও ধরা পড়ে।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস