ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার টাকার জন্য মোকলেছ নামে এক ভণ্ড ফকিরের হাতে খুন হয় নার্গীস আক্তার (৪০) ও তার সঙ্গে থাকা বান্ধবী ময়না বেগম (৫৫)। হত্যাকারী মোকলেছের আদালতে স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে দুই নারীর খুনের মূল রহস্য।
৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মা নার্গীস আক্তার ও তার মায়ের সাথে থাকা ময়না বেগকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ১০ এপ্রিল ছেলে তানভীর আহমেদ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
১৩ এপ্রিল ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকার আওনা চকের পুকুরে এক মহিলা পানি আনতে গিয়ে দুই নারীর লাশ দেখে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঐ দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে। এরপর থেকে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।
মামলার বাদী নার্গীস আক্তারের ছেলে তানভীর আহমেদ পুলিশকে জানায় ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মা নার্গীস আক্তারকে কে বা কারা মোবাইল ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় ময়না বেগম তার সাথে যায়।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ১৫ এপ্রিল সকালে উপজেলার মাতাপপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মোকলেছ মিয়াকে (৩২) আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে মোকলেছ। ১৬ এপ্রিল মোকলেছকে আদালতে পাঠালে সিনিয়র ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর রহমানের আদালতে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মোকলেছ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য ও হত্যার দায় স্বীকার করে থানায় ও আদালতে বলেছেন, অবাধ্য স্বামীকে বাধ্য (বস) করতে নার্গীস আক্তার চর দরি কান্দা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে মো. কাউছার উদ্দিন ফকিরের স্মরণাপন্ন হন। কাউছারের কাছে কয়েকদিন ঘুরাফেরা করে নার্গীস। এক পর্যায়ে এ কাজ করতে পারবে না বলে কাউছার অপারগতা জানিয়ে বলেন আপনার স্বামীকে বাধ্য করতে চাইলে মোকলেছ ফকিরের কাছে যেতে হবে। নার্গীস কাউছারের কাছে মোকলেছ ফকিরের ঠিকানা জানতে চায়।
ঘটনার ১ মাস আগে নার্গীস আক্তারকে সহযোগী কাউছার চরদরি কান্দা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে মোকলেছ ফকিরের কাছে নিয়ে তাকে পরিচয় করে দেন।
স্বামীকে বাদ্য (বস) করতে হলে ৭ হাজার টাকা দিতে হবে বলে নার্গীসের কাছে দাবী করেন মোকলেছ। সে ৭ হাজার টাকা দেয়। মোকলেছের ফকিরি কেরামতিতে কোন ফল না পেয়ে নার্গীস টাকা ফেরত চায়। মোকলেছ টাকা ফেরত দিতে অপরাগতা জানায়। এসময় নার্গীস থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতা তার এক খালাতো ভাইকে জানাবে বলে মোকলেছকে হুমকি দেয় ।
মোকলেছ বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়ে এবং একপর্যায়ে ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোকলেছ টাকা ফেরত দিবে বলে লোকমান নামে এক ইজি বাইক চালকের মোবাইল ফোন নিয়ে নার্গীসকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে তাকে আওনার চকে আসতে বলে। এ সময় নার্গীস বলে এখন যদি টাকা ফেরত দাও তাহেলে আমি সেখানে আসবো। মোকলেছ রাজি হলে নার্গীস ও ময়না আওনার চকে একটি পুকুর পারে আসে। এ সময় মোকলেছ হাতুরী দিয়ে নার্গীসের মাথায় একাধিক আঘাত করে হত্যা করে। এঘটনা দেখে ফেললে নার্গীসের সাথে থাকা ময়নাকে মোকলেছ পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে।
দুই বান্ধবীকে খুন
এ সব তথ্য দেন মামলার তদন্ত অফিসার নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান।
কামরুল হাসান আরো জানায়, মোকলেছের সহযোগী কাউছার উদ্দিনকেও আটক করেছে পুলিশ। নিহত নার্গীসের মোবাইলের শেষ মোবাইল কলটি ছিলো ইজিবাইক চালক লোকমানের। লোকমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে লোকমান জানায় তার কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে মোকলেছ নামে এক ব্যাক্তি ফোন দিয়েছিলো। সেই সূত্রে মোকলেছকে আটক করি। মোকলেছ ওই দুই নারীকে নিজেই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করলে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে মোকলেছ ওই পুকুর থেকে হত্যার আলামত হাতুরী দুই নারীর পরিহিত বোরকা ও নার্গীস আক্তারের সেলোয়ার বের করে দেন। লোকমানকে মামলার স্বাক্ষী রাখা হয়েছেও বলে জানান কামরুল হাসান।
উল্লেখ্য ১৩ এপ্রিল লাশ উদ্ধারের পর নিহত নার্গীসের ছেলে তানভীর আহমেদে জানান, ৯ বছর যাবত মায়ের সাথে বাবার দ্বন্দ্ব চলছে। সে এ বাড়িতে থাকেন না। গত ৫ বছর আগে বাড়িতে এসে তার মাকে বাবা ইমান আলী বালিশ চাঁপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এসময় সে দেখতে পেয়ে মাকে বাঁচায়। বাবা মায়ের এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে লজ্জায় অন্য কাউকে জানান না। তবে একাধিকবার তার মাকে বাবা হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি