ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বহাল চেয়ে আপিলের শুনানি আজ বুধবার ফের শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তার বক্তব্য শুরু করেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শুরু হলেও আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে কালকের মতো শুনানি মুলতবি করেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আপিল শুনানিতে যা বলছেন আইনজীবীরা:- শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার এ দীর্ঘ আইন পেশায় দেখেছি ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের আদেশে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে না।
তার বক্তব্য শেষ হলে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। এরপর শুনানি শুরু করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি জয়নুল আবেদীন। আদালত বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবী রাখেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যে সাজা দেয়া হয়েছে, স্বল্প সময়ের এমন সাজায় হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক বা রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে এমন নজির নেই।
তিনি বলেন, ৭৩ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা তার সাথে দেখা করেছি। তার হাত-পা ফুলা। হাঁটাচলা করতে পারেন না। এমন অসুস্থ একজন মানুষের বিরুদ্ধে কেন তারা আপিলে এসেছেন এটা আদালতকে উপলব্ধি করা উচিত, ভেবে দেখা উচিত, বিবেচনা করা উচিত।
এছাড়া তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দু’টি মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো: নাসিমকে হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা মামলায় জামিন দেন। তার বিরুদ্ধে দুদক ও সরকার আপিল করেনি। শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হাইকোর্ট বাতিল করেছে। দুদক আপিল করেনি।
গতকাল শুনানি শুরু হলে প্রথমে বক্তব্য রাখেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল চান এবং বলেন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া ঠিক হয়নি। সবারই সমান সাজা হওয়া উচিত। পরে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তার বক্তব্য শেষ হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের এক বক্তব্যের জেরে আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করলে আদালত কালকের মতো শুনানি মুলতবি ঘোষণা করে আজকের দিন ধার্য করেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ সিনিয়র আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল এবং খালেদা জিয়ার জামিন বহাল চেয়ে তার পক্ষে দায়ের করা অপর একটি আপিল আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ৮ মে মঙ্গলবার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করা হয়।
আদেশের পর ওই দিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অনুরোধে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকার শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করব।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনো সেই কারাগারে আছেন। একই রায়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হলে ১২ মার্চ চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন।
জামিন আদেশে আদালত বলেন, আদেশ দেয়ার সময় আমরা যেসব বিষয় বিবেচনা করেছি সেগুলো হলো- এক. সাজার পরিমাণ (বিচারিক আদালতে তাকে যে স্বল্প মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে); দুই, মামলাটির বিচারিক আদালতের নথি এসেছে এবং এটি আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি; তিন. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন ও জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং চার. তার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনা করা হলো। আদালত আরো বলেন, তিনি ৭৩ বছর বয়সী একজন নারী এবং দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। এসব বিবেচনা করে তাকে চার মাসের জামিন দেয়া হলো।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস