নুরুল আমিন: সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতো দিয়া খানম ওরফে মিম। স্কুলের জন্য প্রস্তুত হয়ে এক সঙ্গে সকালের নাস্তা করত বাবার সঙ্গে। এরপর মহাখালীতে মেয়েকে বিআরটিসি বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম।
প্রতিদিনের মতো আজও মেয়েকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর একবার ফোন করে মেয়েকে বলেন, মা নিতে আসব? দিয়া বলেছিল, না বাবা তোমাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। আমি নিজেই চলে আসতে পারব। আর ফেরা হল না দিয়ার। বাসচাপা পড়ল আমার আদরের দিয়া। শেষ হল আমার মেয়ের ম্যাজিস্ট্রেট বানানোর স্বপ্নও। মেয়ের মরদেহ দেখে এভাবেই আহাজারি করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী মিমের মৃত্যুর খবর শুনে রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। জরুরি বিভাগে মেয়ের মরদেহ দেখার পর হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের মরদেহ দেখে কয়েকবার মূর্ছাও যান তিনি।
আবার সম্বিত ফিরে পেয়ে বলেন, মেয়েকে কলেজে পাঠানোর পর থেকেই আমার খারাপ লাগছিল। এখন বুঝলাম কেন এমন হচ্ছিল। যদি আগে বুঝতাম এমন করে দুর্ঘটনায় আমার মেয়ে মারা যাবে তাহলে একা ফিরতেই দিতাম না। আমার স্বপ্নের কবর হয়ে গেল আজ।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের হোটেল রেডিসন ব্ল–’র বিপরীত পাশে ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মিম।
এদিকে মেয়ে মিম দুর্ঘটনায় আহতে হয়েছে- এমন খবর পেয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ছুটে আসেন মিমের মা রোকসানা। হাসপাতালে আসার পরও মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ তাকে দেয়া হয়নি। কিন্তু কতক্ষণ এমন সত্য লুকাবেন ডাক্তার, শিক্ষক ও সহপাঠীরা। অবশেষ মেয়ের মৃত্যুর খবর জানলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, মিম কই? তোমরা আমার কলিজার টুকরাকে এনে দাও। আমি আর কিছু চাই না, তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও।
বোনকে কি জবাব দেব : নিহত আবদুল করিম রাজিব বাবাকে হারায় সেই ছোট্টবেলায়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আবদুল করিমের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করতেন আত্মীয়-স্বজনরা। উত্তরার আশকোনা এলাকায় চাচাতো মামার বাসায় থেকে কলেজে যাতায়াত করত।
আবদুল করিমের মামা মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, করিম ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিল। আমার বাসায় থেকে ভাগ্নে পড়াশোনা করছিল। সকাল ৬টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যায়। দুপুরে শুনতে পাই ভাগ্নে বাসের চাপায় মারা গেছে।
বোনকে এখন কি জবাব দেব? ওর মায়ের স্বপ্ন ছিল করিম পড়াশোনা করে বড় হবে। পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু সবকিছু বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে গেল। এদিকে মিমের বান্ধবী রূপা বলেন, এভাবে মিম চলে যাবে বুঝিনি। হাসিখুশি মিম ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। কথা বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন রূপা। কান্না শুরু করলেন রূপার সঙ্গে থাকা সহপাঠীরাও। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে?-যুগান্তর