ঢাকা: বিমানে ওঠার আগে বিষণ্ন অবস্থায় দেখা গেছে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারী মাহাদী ওরফে মাহাবী ওরফে পলাশ আহমেদকে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডমেস্টিক টার্মিনালে প্রবেশের আগ মুহুর্তে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এমন ছবি। প্রায় চল্লিশ মিনিট সেখানে পায়চারি করে সে। এরপর ডমেস্টিক টার্মিনাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি) এর উপ-পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার এস এম সাজ্জাদ হোসেন শাহীন বলেন, ‘বিমানবন্দরের সিকিউরিটি চেকিংয়ের মধ্য দিয়েই তাকে যেতে হয়েছে। তার ব্যাগও স্ক্যানিং করা হয়। তারপরও কেন বিষয়টি ধরা পড়েনি তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, মাহাদী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বাইরে পৌঁছায় দুপুর দুইটার দিকে। তবে সে সময় ভেতরে প্রবেশ না করে সেখানেই পায়চারি করতে থাকে সে। সিসি ক্যামেরায় দেখা দৃশ্যের বরাত দিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘তাকে সে সময় বিষণ্ন ও নার্ভাস দেখাচ্ছিল। তার কাঁধে একটি ব্যাগ ছিল। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমানের বিজি ১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি রবিবার বিকাল পাঁচটায় দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। প্রথমে ফ্লাইটটির চট্টগ্রামে ল্যান্ড করার কথা ছিল। ফ্লাইটের অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এবং আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরা আন্তর্জাতিক টার্মিনাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। যাত্রীদের বাসে করে বে-তে থাকা বিমানে ওঠানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানটি পাঁচটায় ছেড়ে যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে পলাশ অস্ত্রহাতে বিমান ছিনতাইয়ের কথা বলে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে। এর মধ্যেই ৫টা ৪১ মিনিটে বিমানটি চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। ফ্লাইটির ক্যাপ্টেন ছিলেন মোহাম্মদ গোলাম শাফি ও ফার্স্ট অফিসার ছিলেন মুনতাসির মাহবুব। এতে ক্রেবিন ক্রু ছিলেন—শফিকা নাসিম নিম্মি, হোসনে আরা, শরিফা বেগম রুমা, শহিদুজ্জামান সাগর ও আব্দুস শাকুর মুজাহিদ। বোয়িং এর তৈরি ৭৩৭ বিমানটির আসন সংখ্যা ১৬২টি, বিমানের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশের আসন ছিল ‘১৭-এ’ তে।
বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী মাহাদী ওরফে মাহিবী ওরফে পলাশের বিমান ছিনতাই চেষ্টার মোটিভ নিয়ে আলোচনা চলছে। চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেই কি সে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ ছিল, তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং বিশেষ দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র প্রেমঘটিত কারণে একটি বিমান ছিনতাই করতে যাওয়া আশ্চর্যের ব্যাপার। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তল নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান ও র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান পিস্তলটি ফেক ছিল বলে জানিয়েছেন। তবে ঘটনার পরপরই বিমান থেকে বের হয়ে আসা যাত্রীদের অনেকেই ভেতরে দুই রাউন্ড গুলি ছোঁড়ার শব্দও শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পরপরই যাত্রীরা আতঙ্কিত ছিল। তাদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। খেলনা পিস্তল থেকেও শব্দ করা যায়, প্রেমঘটিত বিষয় থেকে সে এমন কাজ করতে পারে, এমন বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে।
মাহাদীর বাবা পিয়ার জাহান সরদার বলেন, ‘মাহাদী স্থানীয় তাহিরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে মোগড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু পড়াশুনার বদলে সে আড্ডাবাজি করতো বেশি, আর টাকা-পয়সা নষ্ট করতো। মাঝখানে কিছুদিন সে মালয়েশিয়ায় গিয়েও থাকে। ঢাকায় থেকে সে নাটক-সিনেমার সঙ্গে কাজ করতো বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম।’
পিয়ার জাহান সরদার বলেন, ‘সে সিমলা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। আমরা বিষয়টি মানতে পারিনি। তবে সে সিমলাকে নিয়ে দুইবার বাড়িতে এসেছিল।’ তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ সে বাড়িতে এসে ২৫ দিন থাকে। এ সময় সে নিয়মিত নামাজ পড়তো ও মসজিদে আজান দিত। আমরা ভেবেছিলাম তার ‘হেদায়েত’ হয়েছে। গত শুক্রবার সে দুবাই যাওযার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর রাতে পুলিশ এসে আমাদের ছবি দেখালে আমরা তাকে শনাক্ত করি।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিমান ছিনতাই চেষ্টার এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্দেহভাজন বিমান ছিনতাইকারী মাহাদী সেনাবাহিনীর ১ নং প্যারা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। বিমানে থাকা যাত্রীরা অভিযানের আগেই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন