সাভার: যে ব্যক্তি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন সেই রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মী নওশাদ হাসান হিমু (২৭) নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আত্মহত্যার পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ কেউ জানাতে পারেনি।
রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের বিরুলিয়ায় শ্যামপুর এলাকা থেকে বুধবার রাত ৯টার দিকে নিজ ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ তাঁর ঝলসে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করে। একই এলাকার আবদুল হক মোল্লার বাড়িতে হিমু একাই ভাড়ায় বসবাস করতেন। সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর হিমু উদ্ধার তৎপরতার জন্য সবার কাছে পরিচিত মুখ ছিলেন। বরিশালের উজিরপুর থানার বাবর গ্রামের সরদার আবুল হোসেনের ছেলে ছিলেন হিমু। বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ‘হিমালয় হিমু’ নামেই বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিলেন।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, হিমু কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও থাকতেন না। পুলিশ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফ এম সায়েদ বলেন, নিজের গায়ে নিজে কিরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেছে হিমু। তিনি গত তিন বছর ধরে শ্যামপুর এলাকায় একাই বসবাস করতেন।
‘হিমালয় হিমু’ নামে হিমুর ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার রাতে আত্মহননের আগে তিনি ফেসবুকে কয়েকটি লেখা পোস্ট করেন। এর মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লিখেন- ‘ছোটকাল হতেই আগুন আমার অনেক পছন্দ’।
হাতুড়ি কড়াত, ছেনি দিয়ে কেটে ছিড়ে উদ্ধার করেছে জীবিত ও মৃত মানুষ রানা প্লাজার মৃত্যুকূপ থেকে। ২/৩ পর থেকে যখন লাশগুলো পচে গন্ধ বের হতে শুরু করে, সে গন্ধ দূর করার জন্য ব্যবহার করা হতো তীব্র গন্ধের এয়ার ফ্রেশনার, রুমস্প্রে ইত্যাদি। ফলে এয়ারফ্রেশনার, পারফিউম বা যেকোন ধরণের সুগন্ধি অসহ্য ঠেকতো হিমুর কাছে। মুরগী বা গরুর কাঁচা মাংস দেখলে সে ঠিক থাকতে পারতো না। মানসিক ডিপ্রেশন বাড়তে থাকে তার মধ্যে।
২০১৬ সালের পর থেকে বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন সকলের নিকট থেকেও সে দূরে চলে যেতে থাকে। মানুষের চাইতে পশুপাখির সাথে তার সান্নিধ্য বাড়তে থাকে। ঢাকা শহর ছেড়ে সে কখনো থেকেছে নারায়ণগঞ্জ, সর্বশেষ ছিলো সাভারের বিরুলিয়াতে। রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বছরে এসে এই ২৪ এপ্রিলেই তিনি নিজের শরীরে উগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন।