রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, ২৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
অ্যাড. এমদাদুল হক লাল, আদালত প্রতিনিধি: বহুল আলোচিত সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে গ্রহন করে ২৪ পলাতক আসামির বিরুদ্বে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।পলাতক আসামির বিরুদ্বে গ্রেফতারি তামিলের জন্য আগামি ২৭ জানুয়ারি পরবর্ওী তারিখ ধার্য করেন আদালত। ঢাকার সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন সোমবার এ আদেশ প্রদান করেন। সরকারি ৪ কর্মকর্তাকে আসামি করার বিষয়ে সরকারের অনুমোদন প্রতিবেদন প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার জন্য সোমবার এদিন ধার্য্য ছিলো।
আগেই চলতি বছরের ৮ জুলাই ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পলাতক সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর রহমান।
এ মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে ২৪ জন পলাতক আছেন। ইমারত নির্মাণ আইনে করা মামলায় ১৮ জনের মধ্যে পলাতক আছেন সাতজন। তবে একই আসামি দু’মামলায় থাকায় মোট ৪২ আসামি ধরা হয়েছে।
সোমবার মামলায় চার্জশিট গ্রহনের শুনানির দিন ধার্য ছিলো। ইতিপৃর্বে এ মামলায় ৪ সরকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক প্রকৌশল মো. ইউসুফ আলী, পরিদর্শক প্রকৌশল মো. শহিদুল ইসলাম,উপ প্রধান পরিদর্শক মো. জামশেদুর রহমান, ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সরকারি মঞ্জুরি আদেশ না পাওয়ার কারণে তাদের চার্জশিটভুক্ত করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মঞ্জুরি আদেশ দেয়ার জন্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনের গ্রহন করেন তাদের বিরুদ্ধে মঞ্জুরি আদেশ দেয়ার জন্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়।
উলে¬খ্য, মামলা দু’টিতে গত ১ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। মামলা দু’টিতে ভবন মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা-মাসহ ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দণ্ডবিধি আইনে একটি এবং ইমারত নির্মাণ আইন অপর চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির মামলার চার্জশিটে ৪১ জনকে এবং ইমারত নির্মাণ আইনের চার্জশিটে মামলায় ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইমারত নির্মাণ আইনের ১৮ জন আসামির মধ্যে ১৭ জনেই দণ্ডবিধির চার্জশিটে রয়েছেন। সেকারনে দুটি চার্জশিট মিলে মোট আসামি ৪২ জন।
মামলার চার্জশিটে আসামিদের মধ্যে সোহেল রানা, রানার বাবা-মা, গার্মেন্টস মালিক, ম্যানেজার, রানাকে পালাতে সহায়তাকারী, সাভার পৌরসভার মেয়র এবং ১২ জন সরকারি কর্মকর্তা আসামি হিসেবে রয়েছেন। মামলার চার্জশিটে মোট ৭৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে প্রকাশ,গত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা নামক ভবন ধসে ১১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়। মোট মৃতের সংখ্যা১১৩৬জন। ধ্বংসস্তুপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত হয়। মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অসনাক্তকৃত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৫২৪ জন আহত হন। তদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করে ৭৮ জন। মামলা দু’টির আসামিদের মধ্যে রানাসহ চারজন ছাড়া সব আসামি জামিন নিয়ে কারাগারের বাইরে রয়েছেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ২১ আসামির মধ্যে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৮ জন জামিনে রয়েছেন। জামিনে থাকা অপর সাত আসামি হলেন, সাভার পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র ও সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি রেফাতউল্লাহ, সোহেল রানাকে যশোরে আত্মগোপনে থাকতে সহায়তাকারী অনিল দাস, শাহ আলম ও আবুল হাসান, রানা প্লাজার অনুমোদন ও নির্মাণ-প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, রানা প্লাজার নকশা অনুমোদনের জন্য সুপারিশকারী সাভার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কমিশনার ও পৌরসভা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান ও সাভার পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। পরে মামলাটিতে অপরাধজনক প্রাণনাশেরও অভিযোগ আনা হয়। সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয় এ মামলায়।অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
ইমারত বিধি মেনে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয়নি- এমন অভিযোগে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। এ মামলায় আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। সেসাথে উভয় মামলায়ই আসামিদের আর্থিক দন্ডও হতে পারে। আসামিদের মধ্যে হত্যা মামলায় ২৫ জন এবং ইমরত নির্মাণ আইনের মামলায় ৭ জন পলাতক রয়েছেন।
২১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস
�