দেশে ব্লগার হত্যা মামলার প্রথম রায় ৩১ ডিসেম্বর
অ্যাড. এমদাদুল হক লাল, আদালত প্রতনিধি: বহুুল আলোচিত গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় প্রদান করা হবে এবছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। দেশে এটিই বগ্লার হত্যার মামলার প্রথম রায়।কোনরুপ অন্যথা না ঘটলে পলাতক এক আসামিসহ আট আসামির বিরুদ্বে দায়ের করা এ মামলার রায় ৩১ ডিসেম্বর প্রদান করবেন ঢাকার দ্রুত বিচার-৩-এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ।
গত ২২ডিসেম্বর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়ে ২৮ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহন করে আদালত রায়ের এদিন নির্ধারন করেন। হত্যাকান্ডের দু’বছর ১০ মাস ১৩তম দিনে এরায় প্রদান করা হচ্ছে।
ঢাকার দ্রুত বিচার-৩-এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদের আদালতে গত ২২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এ মামলায় আসামিদের ফৌজধারি কার্য্য বিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার(আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য জিঞ্জাসাবাদ) করা হয়। আদালত এমামলায় আসামিদের ফৌজধারি কার্য্য বিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার(আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য জিঞ্জাসাবাদ)সময় গ্রেফতারকৃত কারাগারে থাকা মামলার ৭ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদেরকে নির্দোষ বলে দাবি করে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৫ জনের মধ্যে মোট ৩৪ জনের সাক্ষীর গ্রহনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পক্ষের স্বাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত হয়। মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত ২৭ মে নিহত রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন ২৪ জুন সাক্ষ্য দেন নিহতের খালাতো ভাই কাজী গালিবুল ইসলাম । গত ৫ জুলাই সাক্ষ্য দেন মামলার তৃতীয় সাক্ষী নিহতের ছোট ভাই গোলাম মোর্তুজা হায়দার। আনসারুল্লাহ বাংলাটিম প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ৭ আসামিকে জেলহাজত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ১১ মে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার আদালতে বদলি করা হয়েছে।অতঃপর থেকে মামলার কার্যক্রম দ্রুত বিচার-৩ এর বিচারক মোঃ সাঈদ আহমদের আদালতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের দু’ বছর পর গত ২১মে আদালত ৮ আসামির বিরুদ্বে চার্জ গঠন করা হয়।এ মামলায় আসামিদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী ছাড়া বাকিরা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের ছাত্র। গ্রেপ্তারের পর তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা ছাড়া অন্যদের প্রতিটি শুনানির সময় জেল হাজত থেকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। রানা মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার অন্য ৭ আসামিরা হলেন- সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ।আসামিদের মধ্যে সাদমান ছাড়া বাকিরা ঢাকার হাকিম আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বাকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
গত ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর ১০তম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্ল¬বীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এহত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে প্রকাশ পায়। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি তদন্ত শেষে ৮জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব¬গারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা নাস্তিক ব্লগারদের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানিকে এহত্যাকাণ্ডের উৎসাহদাতা হিসেবে উলে¬খ করা হয়েছে। ৫৫ জনকে অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয়ে ছিলো । রাজীব হায়দারের পিতা ডা.মো. নাজিম উদ্দিন বাদি হয়ে পল্লবী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। আসামি পক্ষে এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল,মো. ফারুক আহম্মেদ প্রমূখ্য এবং রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি মো. মাহাবুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস
�