সাজ্জাদ হোসেন: ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পারায় রোগাক্রান্ত কিডনিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয় জোবেদা খাতুনের (৭০)। ব্যথার কারণে মাঝে মাঝেই চোখ-মুখ কুঁকড়ে উঠছে তার। কিন্তু সেই ব্যথাকেও হার মানিয়েছে পেটের ক্ষুধা। ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে না পেরে কিডনির ব্যথা নিয়েই একটু খাবারের জন্য রাস্তায় নেমেছেন জোবেদা।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীর লিংক রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে দেখা হয় জোবেদার সঙ্গে। অসুস্থ শরীরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছিলেন আর ভিক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু একের পর এক পথচারীর কাছে হাত পেতেও কিছু না পেয়ে একপর্যায়ে ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন বৃদ্ধ জোবেদা।
কাঁদছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেবাকতে (সবাই) না করতেছে, আজও কি আমার খাওন জুটবে না!’ জোবেদা জানান, তার স্বামী-সন্তান কেউ নেই। শেখের টেক ৬ নম্বরের বস্তিতে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি।
অসুস্থতা ও বয়সের ভারে কোনো কাজ করতে না পারায় ভিক্ষা করেই জীবন চালাতে হয়। গত সোমবারের টানা বৃষ্টিতে ঘরে এক কোমর পানি ঢুকে পড়ে। এখনো ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি।
এতে ঘরে থাকা সামান্য চাল-ডাল নোংরা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন না খেয়ে থাকলেও কিডনির ব্যথায় ঘর থেকে বের হতে পারেননি। কিন্তু আজ আর ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছেন না। তাই ব্যথা নিয়েই ভিক্ষা করতে বের হতে হয়েছে তাকে।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে জোবেদা বলেন, ‘পেটের ক্ষুধার কাছে কোনো ব্যথাই কিছু না রে বাজান।’ ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী নাঈম উদ্দীন বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই এই বৃদ্ধাকে আশপাশের এলাকায় ভিক্ষা করতে দেখি। অসুস্থতার কারণে ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারেন না, কাঁপতে কাঁপতে পথ চলেন। দেখে খুবই কষ্ট লাগে। কিন্তু কী করব বলুন!’