আরিফুল ইসলাম আরিফ, জাবি প্রতিনিধি: একাউন্টিং এন্ড ইফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে বর্তমানে ছয়টি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী রয়েছে তিনশ জন। চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি শেষে ব্যাচ সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে সাতটি আর শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিনশ। এই সাতটি ব্যাচের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্তমানে কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু বিভাগটিতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক অপ্রতুল। মোট নিয়োগপ্রাপ্ত ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে আর একজন মাতৃকালীন ছুটিতে থাকায় চারজন(এর মধ্যে দুজন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত) শিক্ষক দিয়েই চলছে বিভাগটি। গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিভাগটির জন্য দুজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে এই কয়েকজন শিক্ষক রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরাও তাদের পড়াশুনা নিয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। ইতোমধ্যেই বিভাগটির বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক বছর থেকে দেড় বছরের সেজনজটে পড়েছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াসহ তাদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘এই মুহূর্তে আমরা যে অবস্থানে আছি তাতে মনে হয় না আগামি দেড় বছরের আগে পড়াশুনা শেষ করতে পারবো। আমাদের বন্ধুরা (অন্য বিভাগের) পড়াশুনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুুতি নিচ্ছেন। অনেকে চাকরিও করছেন। অথচ আমরা সেজনজটে পড়ে আছি।
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিত্য বলেন,‘পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে ক্লাস পরীক্ষা কোনটাই ঠিকমত হচ্ছে না। বার বার দাবি জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হোক।’
পাবলিক হেলথ এন্ড ইন্ফরমেটিকস বিভাগে মোট চারটি ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছে দেড় শতাধিক। চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে দুই শতাধিক হওয়ার পাশাপাশি ব্যাচ সংখ্যা হয়েছে পাঁচটি। কিন্তু বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগের জন্য ভাইভা গ্রহন করা হয়েছে কিন্তু নতুন করে এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
পাবলিক হেল্থ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্তিক রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। বারবার দাবি জানিয়েও কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছে। শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহমান জানান, ‘সার্কুলার দেয়া হয়েছে। নিয়োগের প্রক্রিয়া চলতেছে তবে এটি তরান্বিত করলে ভাল হবে’। তিনি বলেন, কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক সহ আমাদের এখন কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষক প্রয়োজন। এত অল্প শিক্ষক দিয়ে বিভাগটি পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি বাড়ছে।
একই চিত্র গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা অধ্যয়ন বিভাগের। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা এই বিভাগে বর্তমানে চারটি ব্যাচে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে আরো অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বিভাগটিতে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র চারজন। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন ছয় মাসের সেশনজটে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য চালু হওয়া বিভাগগুলোসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষকের অভাবে ঠিকমত ক্লাস করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। চাপ সামলাতে এসব বিভাগের শিক্ষকরা একেকজন পাঁচটিরও অধিক ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও শিক্ষকদের এই বাড়তি পরিশ্রমও বিফলে যাচ্ছে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে। ফলে বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিভাগগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকের অভাব থাকলেও তা সমাধানের কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। এখন পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি আর আশ্বাসের বাণীতেই চলছে বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে আট মাস থেকে দেড় বছরের সেশনজটে পড়েছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালযের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, আইন ও বিচার, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও চারুকলা বিভাগে মোট ২১ টি ব্যাচে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। এসব ব্যাচ পড়াতে কমপক্ষে ৭০ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু বিভাগগুলোতে মোট শিক্ষক রয়েছেন ২০ জন। ফলশ্রুতিতে এসব বিভাগের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১০ থেকে ১৫ মাসের সেশনজটে পড়েছেন।
এদিকে বিভাগের দূরাবস্থার জন্য শিক্ষার্থীরা দায়ি করছেন বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্বহীনতাকে। এছাড়াও সভাপতি সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ক্যাম্পাসে না এসে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যস্ত থাকেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অভিযোগের তদন্তে সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সভাপতি অধ্যাপক প্রবাল দত্ত বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণেই সেশনজট ঘটছে। সার্কুলার হয়েছে খুব দ্রুত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
এদিকে আইন ও বিচার বিভাগেও একই অবস্থা বিরাজমান। চারটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। বাকিটা চলছে ‘গেস্ট টিচার’ দিয়ে। ফলে সেশন জটের জালে আটকা পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর সত্যতা স্বীকার করে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক জনাব মো: রবিউল ইসলাম বলেন, “নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেশনজট দূর করতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেমিস্টার পদ্ধতি পরিবর্তন করে বর্ষ পদ্ধতিতে চলে যাওয়ার কথা জানান তিনি।”
শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগেও। মোট তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মোট চারজন।
সেশন জটের ব্যাপারে জানতে চাইলে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসান টিটু বলেন,“ শিক্ষক সংকটের বিষয়টি নিয়ে আমরা জ্ঞাত আছি। এ বিষয়ে সার্কুলার দেয়া হয়েছে এবং খুব তাড়াতাড়ি নতুন শিক্ষক আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন,‘ক্যাম্পাসে দীর্ঘকালীন ছুটি ও আমাদের সাময়িক কিছু সমস্যার জন্য শিক্ষক নিয়োগ একটু দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিভাগগুলোতে শিক্ষক সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি’
৪ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস