আরিফুল ইসলাম আরিফ, জাবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় । কিন্তু শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা দিতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়টি হারাচ্ছে তার আবাসিক নামের তকমাটি।
বিভিন্ন হলে সিট সংকট বিগত কয়েক বছরে তীব্র আকার ধারন করেছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ভর্তির পরপরই হলে সিট পাওয়ার কথা থাকলেও এখন হলে সিট পাওয়া যেন আকাশ কুসুম বা অসম্ভব কল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবমিলিয়ে প্রায় ১৪০০০ জন। এর বিপরীতে সাতটি ছাত্র হল এবং ছয়টি ছাত্রী হলে সিট রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮৩৬ টি । ফলে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে ৬ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী।
আবার ১২ মার্চ থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে । ফলে এসময় একসাথে প্রায় ২ হাজারের মত শিক্ষার্থী হলে উঠায় এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিট সংকটের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। সেশনজট, ছাত্রত্ত্ব শেষ হওয়ার পরও সিট দখল করে অবৈধভাবে হলে অবস্থান , রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাধিক সিট দখল করে থাকা, বিভাগ গুলোতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এরমধ্যে অন্যতম।
এছাড়া সিট বন্টনে হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনহীনতা ও উদাসীনতাকে অন্যতম প্রধান কারণ মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে হলগুলোতে আসন বরাদ্দের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েই নিরব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরই নিয়ন্ত্রন চলে যায় হল প্রশাসনের পরিবর্তে দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে । হলে আগে সিট পেতে চাইলে হলের ‘পলিটিক্যাল বড়ভাই’দের হাত ধরে যেতে হয়। নইলে মত পোষণ করতে হয় ‘পলিটিক্যাল সদস্য’ হবার। কে কতটি মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে ,এসব পলিটিক্যাল ভাইরা আড়াল থেকে তদারকি করে। কে বেশি ‘পলিটিক্যাল ভাইদের’ সাথে পরিচিত। এসব পরীক্ষায় যে আগে পাশ করবে তার সিট মিলবে আগে এবং ‘পলিটিক্যাল ব্লক’ নামের বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ব্লকে হবে তার সুখের ঠিকানা।
বিশ্ববিদ্যালয়টি আবাসিক জেনেই সবাই ভর্তি হয় এখানে। কিন্তু ভর্তির পর দেখা যায় বিপরীত অবস্থা। ফলে কোন উপায় না পেয়ে অনেকে পাড়ি জমাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে। সেখানে তাদেরকে বেশিমূল্য দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এছাড়াও সমস্যার অন্ত নেই রুমগুলোতেও। একসাথে এতগুলো শিক্ষার্থী একরুমে থাকলে কিভাবে পড়াশোনা করা সম্ভব প্রশ্নটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমরা বদ্ধপরিকর। এ আবাসিক সংকট থেকে উত্তরনের জন্য নবনির্মিত একটি ছাত্র ও দুইটি ছাত্রী হলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করা হচ্ছে এ হল গুলোর কাজ শেষ হলে আবাসিক সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।’
৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস