নিউজ ডেস্ক: ‘ওরা আমাকে খেতে দিত না। এক-দুই দিন পর পর একটি রুটি দিত। আর গৃহকর্ত্রী প্রায়ই মারধর করতেন। একদিন ইস্ত্রি করার সময় জামা পুড়ে গেলে গরম ইস্ত্রি আমার হাতে চেপে ধরেন গৃহকর্ত্রী। বাসা থেকে বের হতে ও দেশে যোগাযোগ করতে দিতেন না।’ তিন মাস পর ‘বন্দিদশা’ থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসব অভিযোগ করেন সোমা আক্তার নামের এক তরুণী। সোমা (১৮) সাভার পৌরসভার অমরপুর মহল্লার বাসিন্দা। তাঁর বাবা শহর আলী দিনমজুর। অভাবের সংসার। বাবাকে একটু সহায়তা দিতে দালালের মাধ্যমে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তিনি এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন। ঢাকার পুলিশ সুপারের (এসপি) সহযোগিতায় গত মঙ্গলবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন।
নিজ বাড়িতে সোমার বাবা শহর আলী বলেন, পোশাক কারখানায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে রাজধানীর আজিজ ট্রেডিং করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বিল্লাল হোসেন তাঁর মেয়েকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নেন। নির্যাতনের কথা শোনার পর মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিল্লালকে তিনি অনুরোধ করেন। বিল্লাল তাঁর কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন।
সোমা বলেন, পাঠানোর পর তাঁকে সৌদি আরবের হায়াল নাসিম এলাকায় খালেদ আল আমুদি নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়া হয়। তাঁকে সেখানে একটি ফ্ল্যাটে একরকম বন্দী অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়। দিন-রাতে এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে দেওয়া হতো না। কাজে যোগদানের তিন দিন পরই তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই বাড়ির এক মালির (বাংলাদেশি) মুঠোফোন থেকে তিনি পরিবারের সদস্যদের তাঁর ওপর নির্যাতনের কথা জানান।
স্থানীয় পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রমজান আহামেদ বলেন, শহর আলী তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁরা বিষয়টি ঢাকার এসপি হাবিবুর রহমানকে জানান। পরে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন এসপি।
বিল্লাল বলেন, ‘সোমাকে গৃহকর্মী হিসেবেই সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অনেককেই তো সে দেশে পাঠানো হয়। তাঁরা কাজ করছেন। কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সোমা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ জানার পর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।’ সোমার বাবার কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ বিল্লাল অস্বীকার করেছেন।
সোমাকে দেশে ফিরতে সহযোগিতার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এসপি হাবিবুর রহমান।-প্রথম আলো
১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ