রুদ্র মিজান: শিমলা। দেখতে সুন্দরী। চেহারায় কখনও মধ্যবিত্ত, কখনও আভিজাত্যের ছাপ। নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে। নিজেকে কখনও মডেল, কখনও অভিনেত্রী পরিচয় দেন। প্রকৃতপক্ষে এসবের কিছুই করেন না তিনি। মূলত শিশু অপহরণ ও ব্ল্যাকমেইলই তার পেশা। শিমলার এই চক্রে রয়েছে ১০-১২ জন। মডেলিং ও অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরী-তরুণীদের অপহরণ করে তারা। তারপর দাবি করা হয় মুক্তিপণ। কখনও কখনও অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হয় অনেক তরুণীকে। একইভাবে নিজের সুন্দর চেহারাকে পুঁজি করে তরুণদের সঙ্গে সখ্য গড়েন শিমলা। পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্ব লুটে নেন এই চক্রের সদস্যরা। সমপ্রতি এই চক্রের তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একই ঘটনায় পলাতক রয়েছে আরও তিনজন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন শিমলা ও তার দুই সঙ্গী। রাজধানীজুড়ে রয়েছে এই চক্রের জাল। ইতিমধ্যে তাদের দুটি বাসার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
সূত্রে জানা গেছে, কমবয়সী সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে এই চক্র। নানাভাবে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্ধকারে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই এই পথ বেছে নেন নির্যাতিতা অনেকে। কারও কারও মুক্তি মিললেও আইনি জটিলতা এড়াতে থানা পুলিশমুখো হন না। এই চক্রের সদস্যরা ছদ্মবেশ ধারণের জন্য নিজেদের প্রকৃত নাম গোপন করে থাকে। চক্রের অন্যতম সদস্য শাহরিয়ার হাসান রিয়ান নামে পরিচিত হলেও তার প্রকৃত নাম হাসানুর রহমান। পুলিশ জানিয়েছে, ফাতেমা আক্তার শিমলার সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে লিভ টুগেদার করছেন হাসানুর রহমান। যদিও স্বামী স্ত্রী হিসেবে দুজন পরিচয় দিয়ে থাকেন। মূলত অপকর্মের সঙ্গী হিসেবেই একসঙ্গে থাকেন তারা। গ্রেপ্তারের পর হাসানুর রহমান, ফাতেমা আক্তার শিমলা ও দুলিয়া আক্তারকে দু’দফা রিমান্ডে নিয়েছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
গত ১৮ই মে সর্বশেষ দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাদের। রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তারা।
সমপ্রতি উত্তরা আজমপুরের নবাব হাবীব উল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীকে অপহরণ করে এই চক্র। জিজ্ঞাসাবাদে শিমলা জানিয়েছে, ওই স্কুলছাত্রীর এক সহপাঠী শিমলার প্রতিবেশীর মেয়ে। ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতো ওই ছাত্রী। অপহরণের কয়েক সপ্তাহ আগেই ওই কিশোরীকে টার্গেট করে শিমলা। নিজেকে মডেল পরিচয় দিয়ে কিশোরীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। তাকে মডেল বানানোর অফার করে শিমলা। মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৮ই এপ্রিল বিকালে দক্ষিণখান থেকে রামপুরা নিয়ে যায় তাকে। কথা ছিল সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছে দেবে। তাই মা-বাবা কাউকে জানানোর দরকার নেই।
রামপুরার জামতলার একটি বাসায় নিয়ে হাসানুরকে পরিচালক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। নানা প্রয়োজন দেখিয়ে, এক পর্যায়ে ভয়-ভীতি সৃষ্টি ও মারধর করে ওই কিশোরীকে আটকে রাখা হয়। কিশোরীকে ওই বাসায় রেখে শিমলা চলে যায় দক্ষিণখানে। রাতভর সেখানে তার সাথে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকে হাসানুর। পরদিন সকালে পার্শ্ববর্তী দুলিয়া আক্তারের বাসায় নিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্য জুয়েল ওরফে মালেক, নাসির ও ইমন। সেখানে শ্লীতাহানির শিকার হয় ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই ছাত্রী। প্রথমে ১ লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি র্যাব-১ এর কর্মকর্তাদের জানান কিশোরীর পিতা। পরে ২০শে এপ্রিল রাতে অভিযান চালিয়ে কিশোরীকে উদ্ধার করে র্যাব। এ সময় শাহরিয়ার ওরফে হাসানুর, শিমলা ও জুলিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সখ্য গড়ে তরুণদের রামপুরার জামতলার ওই বাসায় ডেকে নিয়ে যেত শিমলা। অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে তার চক্রের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সর্বস্ব লুটে নিতো। এরকম কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে-বেনামে কয়েকটি আইডি ব্যবহার করতেন শিমলা। সেখানে নিজেকে মডেল পরিচয় দিয়ে বিত্তশালী তরুণদের টার্গেট করে সখ্য গড়ে তুলতেন। স্কুলছাত্রী অপহরণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে দু’দফা রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানা পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, শিমলা ও হাসানুরের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে নানা ধরনের অপরাধ করছিল এই চক্র। ব্ল্যাকমেইল, অপহরণই তাদের পেশা। জিজ্ঞাসাবাদে নানা অপকর্মের বিষয় স্বীকার করেছেন তারা। এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পারলে আরো তথ্য জানা যাবে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। এই চক্রের শিমলা ও হাসানুর রহমান ওরফে শাহরিয়ার হাসান রিয়নের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের তেলিগাতি। হাসানুর রহমানের পিতার নাম সিদ্দিকুর রহমান। জুলিয়া আক্তারের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনির চরদৌলতপুরে।-এমজমিন
৩০ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ